(১)ভূমিরূপ বিদ্যার জনক উইলিয়াম মরিস ডেভিস।
(২)১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম মরিস ডেভিস Geomorphology কথাটি ব্যবহার করেন।
(৩)টেকটনিক কথাটির অর্থ গঠন বা নির্মাণ
(৪)মৃত্তিকা বিজ্ঞানের জনক ডকুচেভ।
(৫)গ্রেড(grade) শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন জি.কে গিলবার্ট G.K Gilbert ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে।
(৬)গ্রেডেশন (gradation)শব্দটি সর্বপ্রথম প্রয়োগ করেন চেম্বারলিন ও স্যালিসবারি ১৯০৪
(৭)গ্রানাইট শিলা দ্বারা গঠিত ভূমিরূপ গোলাকৃতি ।
(৮)ব্যাসল্ট শিলা দ্বারা গঠিত ভূমিরূপ চ্যাপ্টার আকৃতি হয় ।
(৯)USDAএর পুরো নাম United States department of agriculture
(১০)ABC of soil বইটি লিখেছেন Jacob Samuel Joffe
(১১)A B স্তরকে একত্রে সোলাম বলে ।
(১২)উষ্ণ মরু অঞ্চলে প্রাপ্ত অনুচ্চপাহাড়কে ইনসেলবার্জ বলে ।
(১৩)শিলা চূর্ণ দ্বারা থেকে মাটি সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে পেডোজেনেসিস বলে ।
(১৪)আবহবিকার শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন গিলবার্ট ।
(১৫) মৃত্তিকা সংক্রান্ত বিজ্ঞানকে পেডোলজি বলে ।
(১৬) মৃত্তিকা বিজ্ঞানীদের পেডোলজিস্ট বলে ।
(১৭) যে শিলা থেকে মৃত্তিকার সৃষ্টি হয় তাকে আদি শিলা বা জনক শি্লা বলে ।
(১৮)শিলাস্তরে থাকা অতি সূক্ষ্ম চিড়কে দারণ বলে ।
(১৯)শিলাস্তরের টানে ও চাপে দারণ যখন বরফাকে পরিণত হয় তখন তাকে ফাটল বলে ।
(২০) ৫ই ডিসেম্বর কে বিশ্ব মাটি দিবস বলে ।
(২১)পৃথিবীর দীর্ঘতম চ্যুতির নাম ক্যালিফোর্নিয়ার সান আন্দ্রিজ চ্যুতি ।.
(২২)ক্লাইনোমিটার (clinometer )যন্ত্রের সাহায্যে নতির মান নির্ণয় করা হয়
(১)মৃত্তিকা কাকে বলে ?
উত্তর – ইংরেজি ‘Soil’ শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ মৃত্তিকা বা মাটি। ‘Soil’ শব্দটি ল্যাটিন ‘সোলাম’ (Solum) থেকে এসেছে। যার অর্থ ‘মেঝে’ বা ‘ভূমিতল’ (Floor)।
বিজ্ঞানীদের প্রদত্ত সংজ্ঞা (Definition) –
বিজ্ঞানী হিলগার্ড (Hilgard, 1892)-এর মতে, “মুত্তিকা হল এমন এক শিথিল পদার্থ, যার মধ্যে উদ্ভিদ জন্মাতে পারে এবং বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়।’
ডকুচেভ ( Docuchev 1893)-এর মতে, ‘মুত্তিকা হল এমন এক গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক পদার্থসমূহের সমষ্টি, যা আবহাওয়া, ভূতাত্ত্বিক গঠন ও সময়ের প্রভাবে শিলা ও বিভিন্ন জৈব পদার্থ নিয়ে গঠিত হয়।’
জেনি (Jenny, 1941)-এর মতে, ‘মাটি হলএমন এক প্রাকৃতিক বস্তু, যা জলবায়ু, জীবমণ্ডল, অধঃস্থিত শিলা, প্রকৃতি প্রভৃতির দীর্ঘকালীন ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফল।’
প্রশ্ন(২) মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্যCharacteristics of Soil) লিখ ।
উত্তর-মৃত্তিকার মধ্যে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য দেখা যায়
……………………………………………………………………………………………………………………………………………
(১)প্রাকৃতিক উপাদান- মৃত্তিকা পরিবেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান। কঠিন, তরল, গ্যাসীয় পদার্থের সমন্বয়ে মাটি গঠিত হয়।
(২)শিথিল আবরণ-মৃত্তিকার ভূপৃষ্ঠের সুক্ষ্ম ও শিথিল পদার্থের একটি পাতলা স্তর, যেখানে উদ্ভিদ জন্মাতে পারে ।
(৩)ধারক বাহক – পরিবেশে উপস্থিত সকল জীবকূল এই প্রাকৃতিক উপাদান থেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাদের রসদ সংগ্রহ করে। জীবকূলের জীবনধারণের ধারক বাহক হল মাটি।
(৪)কৃষিজ ফসলের উৎপাদন-(৪)মাটির গুণাগুণের ওপর কৃষিজ ফসলের উৎপাদন নির্ভরশীল ।
(৫)সময় সাপেক্ষ-মৃত্তিকা সৃষ্টিতে কোটি কোটি বছর সময় লাগে
(৬)স্তর-মৃত্তিকার মধ্যে একাধিক স্তর দেখা যায় ।
প্রশ্ন(৩)মৃত্তিকার উপাদান(Components of soil) কি কি ?
উত্তর-মাটির উপাদানের মধ্যে রয়েছে:
1. অজৈব উপাদান – এগুলি মূল শিলা থেকে প্রাপ্ত খনিজ। যেমন: ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, সালফার ইত্যাদি। 16টি মাটির খনিজ 2টি গ্রুপে বিভক্ত, যেমন –
(ক) মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস: বোরন (B), ক্লোরাইড (Cl), তামা (Cu), আয়রন (Fe), ম্যাঙ্গানিজ (Mn), মলিবডেনাম (Mo), নিকেল (Ni) এবং দস্তা (Zn)
(খ) ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস : নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কার্বন এবং সালফার
2. জৈব উপাদান – এগুলি উদ্ভিদ প্রাণীর আংশিকভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত এবং পচনশীল পদার্থ, যাকে হিউমাসও বলা হয় । এতে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
3. জীবন্ত প্রাণী – এগুলি মাটিতে বসবাসকারী অণুজীব। উদাহরণ : আর্কিয়া, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং প্রোটোজোয়া।
4. বায়ু – এটি মাটির বিভিন্ন উপাদান এবং উপাদানগুলির মধ্যে আটকে থাকা বায়ু। গাছের শ্বাস-প্রশ্বাস এবং ফলত প্ল্যাট বৃদ্ধির জন্য আটকে থাকা বায়ু প্রয়োজনীয় । মাটিকে বায়ুশূন্য করার জন্য চাষ করা হয়।
5. জল : মাটিতে জল থাকে, যাকে মাটি-আর্দ্রতা বলা হয়। মাটির আর্দ্রতার ঘাটতিকে হাইড্রোলজিক্যাল খরা বলে।
6. গ্যাস : মাটিতে রাসায়নিক ও জৈবিক প্রক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন প্রধান মাটি বাহিত গ্যাসের মধ্যে রয়েছে কার্বন ডাই অক্সাইড ( CO2 ), মিথেন ( CH4 ), নাইট্রাস অক্সাইড ( N2O ), এবং অ্যামোনিয়া ( NH3 )।
প্রশ্ন(৫)মৃত্তিকা বিজ্ঞান (soil science)কাকে বলে ?
উত্তর- বিজ্ঞানের যে শাখায় মৃত্তিকার সৃষ্টি ,উপাদান , নিয়ন্ত্রক,ধর্ম, বন্টন, শ্রেণিবিভাগ, মৃত্তিকার সঙ্গে অন্য উপাদানের সম্পর্ক মৃত্তিকা ক্ষয়, সংরক্ষণ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা করা হয় তাকে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বলে। মৃত্তিকা বিজ্ঞানের দুটি উল্লেখযোগ্য শাখা হলো পেডোলজি ও এডাফোলজি।
প্রশ্ন(৫)পেডোলজি (Pedology) ও এডাফোলজি (Edaphology) :
পেডোলজি (Pedology) :মৃত্তিকা বিজ্ঞানের যে শাখায় মৃত্তিকার সৃষ্টি,স্তরায়ণ, ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য, মৃত্তিকার বণ্টন প্রভৃতি বিষয়ের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা করা হয় তাকে ‘পেডোলজি’ বলা হয়।
B. এডাফোলজি (Edaphology) : উদ্ভিদের স্বাভাবিক জন্ম ও বৃদ্ধি সংক্রান্ত মৃত্তিকার গুণাগুণ যেমন- মৃত্তিকার আর্দ্রতা, গ্রথন, মৃত্তিকার জৈবপদার্থ প্রভৃতি মৃত্তিকা বিজ্ঞানের যে শাখায় আলোচিত হয় তাকে এডাফোলজি বলে।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………
প্রশ্ন (৬)মৃত্তিকার ক্যাটেনা(Soil Catena) কাকে বলে? (2)
উত্তর।-ভূমিরূপের উচ্চতা ,ঢাল, জল নিকাশি ব্যবস্থা ইত্যাদির পার্থক্যের কারণে একই জলবায়ু ও একই আদি শিলা অধ্যুষিত অঞ্চলে ভূমির ঢাল বরাবর উপর থেকে নিচের দিকে মৃত্তিকা পরিলেখের যে পরিবর্তন দেখা যায় তাকে মৃত্তিকার কাটেনা বলে। মৃত্তিকা বিজ্ঞানী মিলনে মৃত্তিকা ক্যাটেনার কথা উল্লেখ করেন।
প্রশ্ন(৭) কঙ্কালসার মৃত্তিকা কাকে বলে ? (2)
কঙ্কালসার মাটি (Skeletal Soil) : অধিক ভূমিরঢালযুক্ত অঞ্চলে আবহবিকার দ্বারা চূর্ণ-বিচূর্ণ শিলাসমূহ অপসারিত হলে মৃত্তিকা স্তর গঠনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়এবং মৃত্তিকা অপরিণত অবস্থায় থাকে। এই অপরিণত মৃত্তিকার উপর বিভিন্ন আকৃতির পাথর, বোল্ডার, শিলাখন্ড অবস্থান করলে, উদ্ভিদ জন্মানোর অনুপযোগী যে মৃত্তিকার সৃষ্টি হয় তাকে কঙ্কালসার মৃত্তিকা বলে ।
প্রশ্ন(৮)রেগোলিথ (Regolith) কাকে বলে?
* রেগোলিথ (Regolith) : আবহবিকার দ্বারা আদি শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ভূপৃষ্ঠের ওপর যে শিথিল, আলগা, অসংবদ্ধ ভূ-আস্তরণ সৃষ্টি করে তাকে রেগোলিথ বলা হয়। রেগোলিথ শিলা ও মাটির মাঝামাঝি অবস্থা।
প্রশ্ন(৯)(সোলাম (Solam) কাকে বলে ?
সোলাম (Solam) : Solam একটি ল্যাটিন শব্দ। এর অর্থ মৃত্তিকা বা জমি। আবহবিকার দ্বারা চূর্ণ-বিচূর্ণ শিলাসমূহ জলবায়ু ও উদ্ভিদের প্রভাবে মৃত্তিকায় পরিবর্তিত হলে সোলাম গঠিত হয়। সোলাম বলতে বোঝায়। মৃত্তিকার A ও B স্তরকে একত্রে সোলাম বলে ।
সিলেবাস- মৃত্তিকা গঠনের নিয়ন্ত্রক,(Soil Forming factors)
প্রশ্ন(১) – মৃত্তিকা সৃষ্টির নিয়ন্ত্রক গুলি কি কি ? অথবা মৃত্তিকা সৃষ্টির প্রভাব গুলি কি কি ? অথবা মৃত্তিকা গঠনের সক্রিয় প্রভাব গুলি লেখো। অথবা মৃত্তিকা সৃষ্টির কারণগুলি কি কি? প্রশ্নের মান- ২
উত্তর – মৃত্তিকা সৃষ্টির কারণগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় । যথা- (১) সক্রিয় কারণ বা সক্রিয় প্রভাবক (২) নিষ্ক্রিয় কারণ বা নিষ্ক্রিয় প্রভাবক
(ক) সক্রিয় কারণ বা প্রত্যক্ষ প্রভাবক (Active factors )- জলবায়ু এবং জীবজগৎ হল মৃত্তিকা সৃষ্টির সক্রিয় কারণ বা প্রভাবক। মৃত্তিকা সৃষ্টির জন্য এরা শক্তি যোগায় এবং ভূ-আস্তরণ বা রোগালিথকে পরিবর্তন করে।
(খ) নিষ্ক্রিয় কারণ বা পরোক্ষ প্রভাবক (Passive factors )- ভূপ্রকৃতি ,আদশিলা , সময় ইত্যাদি মৃত্তিকা সৃষ্টিতে পরোক্ষ ভূমিকা পালন করে ।
প্রশ্ন(২) মৃত্তিকা সৃষ্টিতে জলবায়ুর প্রভাব আলোচনা কর । প্রশ্নের মান -৩ উত্তর – জলবায়ুর মৃত্তিকা সৃষ্টির অন্যতম প্রভাবক। জলবায়ুর প্রধান দুটি উপাদান যথা- বৃষ্টিপাত ও উষ্ণতা মৃত্তিকা সৃষ্টিতে অংশগ্রহণ করে ।বৃষ্টিপাতের প্রভাব: (১) বৃষ্টিপাত মৃত্তিকা স্তরায়ন, গভীরতা ও মৃত্তিকা রাসায়নিক উপাদানগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
(২) অধিক বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে দ্রবণের মাত্রা বেশি হওয়ার জন্য মৃত্তিকা অম্ল প্রকৃতির হয়।
(৩) বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় শুষ্ক অঞ্চলের মৃত্তিকা ক্ষারকীয় প্রকৃতির হয়।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………
(৪) বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতার উপর মৃত্তিকার ph মান নির্ভর করে । অম্ল প্রকৃতির মৃত্তিকার ph মান কম হয় এবং ক্ষার প্রকৃতির মৃত্তিকায় ph মান বেশি হয়।
(৫)অধিক বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে মৃত্তিকার স্তরগুলি পুরু হওয়ার ফলে গভীরতা বাড়ে এবং অল্প বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে মৃত্তিকার গভীরতা কমে।
(৬)বৃষ্টিপাতের জন্য বিভিন্ন খনিজ পদার্থ অনুস্রাবিত হতে পারে।
উষ্ণতা বা তাপমাত্রার প্রভাব – উষ্ণতার তারতম্যে মৃত্তিকা সৃষ্টির হার নির্ভর করে ।
(১) উষ্ণতা বাড়লে আবহবিকারের তীব্রতা বেড়ে যায় । ফলে মৃত্তিকার গভীরতা বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়।(২) অধিক তাপমাত্রার জন্য মরু ও মরু প্রায় অঞ্চলে বাষ্পীভবন বেশি এবং মৃত্তিকা শুষ্ক ও লবণাক্ত প্রকৃতির হয়।(৩) অধিক উষ্ণ অঞ্চলের মৃত্তিকায় জৈব পদার্থ ও নাইট্রোজেনের পরিমাণ কম থাকে।(৪) অধিক উষ্ণতা যুক্ত অঞ্চলে কাদা জাতীয় খনিজ যথা- কেওলিনাইট, মান্টামোরিলোনাইট প্রভৃতির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।(৫) অধিক উষ্ণতা যুক্ত অঞ্চলের মৃত্তিকা লাল ও বাদামি বর্ণের হয়।(৬) শীতল অঞ্চলে মৃত্তিকা খুব মৃদু গতিতে উৎপন্ন হয়।
প্রশ্ন(৩) মৃত্তিকা সৃষ্টিতে ভূ-প্রকৃতির প্রভাব লিখ।
উত্তর:-ভূ-প্রকৃতি অর্থাৎ ভূমির আকার বা চেহারা মৃত্তিকা গঠনে প্রভাব বিস্তার করে। ভূ প্রকৃতির তারতম্যহেতু বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন প্রকৃতির মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়। যেমন-
(১) পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমির ঢাল বেশি হওয়ার জন্য ভূমিক্ষয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং মৃত্তিকা অগভীর ও স্তর পাতলা হয় (৫০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার)।
(২) মালভূমি অঞ্চলে ভূমির ঢাল মাঝারি তাই মৃত্তিকার গভীরতা মাঝারি ধরনের হয় (৫০ থেকে ১৫০সেন্টিমিটার)।।(৩) সমভূমি অঞ্চলে ভূমির ঢাল অল্প তাই অধিক বৃষ্টিপাত হলে অনুস্রবণ প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পায় এবং মৃত্তিকার গভীরতা বেড়ে যায়।(৪) নিচু জলাভূমি যুক্ত অঞ্চলে গ্লেইজেশন প্রক্রিয়ার জন্য মৃত্তিকার রং নীল সবুজ এবং হলুদ প্রকৃতির হয়।। (৫)পাহাড়ি অঞ্চলে সাধারণত পডজল বা পডসল মৃত্তিকা মালভূমি অঞ্চলে কৃষ্ণমৃত্তিকা এবং সমভূমি অঞ্চলে পলিমৃত্তিকা সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন(৪) মৃত্তিকা সৃষ্টিতে সময়ের প্রভাব লিখ । প্রশ্নের মান -৩
উত্তর:-মৃত্তিকা সৃষ্টিতে সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিছু কিছু মৃত্তিকা অল্প সময়ে এবং কিছু কিছু মৃত্তিকা দীর্ঘ সময় পরিপূর্ণতা লাভ করে। মৃত্তিকা গঠনের সময় বলতে আবহবিকারের ফলে উৎপন্ন শিলাচূর্গুলি মৃত্তিকায় পরিণত হতে যত সময় লাগে তাকে বোঝায়। মৃত্তিকা গঠন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। দেখা গেছে ১ ইঞ্চি মৃত্তিকা তৈরি হতে সময় লাগে কয়েক শত বছর।
(১ ) সময়ের উপর নির্ভর করে কোথাও পরিণত মৃত্তিকা আবার কোথাও অপরিণতার মৃত্তিকা চোখে পড়ে।(২ ) আদি শিলার কাঠিন্যের উপর মৃত্তিকা সৃষ্টির সময় নির্ভর করে। (৩ ) কঠিন নাইস থেকে মৃত্তিকা সৃষ্টি হতে বেশি সময় এবং কোমল শেল থেকে মৃত্তিকা সৃষ্টি হতে অল্প সময় লাগে। (৪ ) উষ্ণ- আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে মৃত্তিকা অতি অল্প সময়ে এবংশীতল জলবায়ু অঞ্চলে মৃত্তিকা অধিক সময়ে পরিপূর্ণতা পায়।
প্রশ্ন(৫) মৃত্তিকা সৃষ্টিতে জীবজন্তুর প্রভাব লেখো। প্রশ্নের মান -৩
উত্তর:- মৃত্তিকা সৃষ্টি একটি জৈবিক প্রক্রিয়া। তাই মৃত্তিকা গঠনে উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের বিশেষ ভূমিকা দেখা যায়।
উদ্ভিদজগতের প্রভাব
(১) শীতল জলবায়ু অঞ্চলে সরলবর্গীয় গাছের আধিক্য হেতু ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম প্রভৃতি ধাতব উপাদান কম থাকে বলে মৃত্তিকা অম্লপ্রকৃতির হয়।(২) তৃণ আচ্ছাদিত অঞ্চলে জৈব পদার্থ বেশি থাকায় মৃত্তিকা ক্ষারকীয় হয়, মৃত্তিকা রং কালো হয়, জল ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।(৩ ) মৃত উদ্ভিদের ডালপালা, পাতা ইত্যাদি পচে হিউমাস সৃষ্টি হয়। এই হিউমাস মৃত্তিকা্র উর্বরতা বাড়ায়।
প্রাণিজগতের প্রভাব
(১) উইপোকা, কেঁচো, কেন্নো, পিঁপড়ে, ইঁদুর, ছুঁচো ইত্যাদি মৃত্তিকার উপরের স্তর ও নিচের স্তরের মধ্যে সংমিশ্রণ ঘটায়। ফলে মৃত্তিকাতে বায়ু চলাচল খুব সহজ হয় এবং মৃত্তিকা খুব আলগা হয়।
(২) কেঁচোর মল নাইট্রোজেন ও ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় মৃত্তিকা উর্বর হয়।
(৩) শামুকের দেহাবশেষ মৃত্তিকায় চুনের অভাব পূরণ করে।
(৪) গলিত জীবদেহ অর্থাৎ হিউমাস মৃত্তিকার উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
প্রশ্ন(৬) মৃত্তিকা সৃষ্টিতে আদিশিলা বা জনকশিলার প্রভাব লেখ। প্রশ্নের মান -৩
উত্তর:- মৃত্তিকা সৃষ্টিতে আদিশীলা বা জনক শিলা প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রানাইট, ব্যাসল্ট, চুনাপাথর, বেলেপাথর, নিস, মার্বেল, প্যারিডোটাইট ইত্যাদি জনক শিলা রূপে কাজ করে। আদি শিলার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মৃত্তিকার গুণাগুণ নির্ভর করে। আদিশিলা অনুযায়ী মৃত্তিকার গ্রথন,কাঠামো, জলধারণ ক্ষমতা, বর্ণ, PH মান ইত্যাদি নির্ভর করে। যেমন –
(১) আদিশীলা ব্যাসল্ট হলে তা থেকে কৃষ্ণ মৃত্তিকা ল্যাটেরাইট ও লাল মৃত্তিকা সৃষ্টি হয় ।
(২) গ্রানাইট ও নিস্ জাতীয় শিলায় ফেলসপা্রের পরিমাণ বেশি হলে কাদামাটি সৃষ্টি হয়।
(৩) চুনাপাথর থেকে রেনজিনা মৃত্তিকা জন্ম হয়।
(৪) আদিশিলায় চুনের পরিমাণ বেশি হলে মাটি খুব শক্ত হয়।
(৫) আদিশিলা পেরিডোটাইড হলে সেই মাটি ক্ষারধর্মী হয়।
(৬) চুনাপাথর ও কোয়াটজ সমৃদ্ধ মাটির বর্ণ সাদা হয়।
সিলেবাস- মৃত্তিকা পরিলেখ(Soil profile development),
প্রশ্ন(১)-মৃত্তিকার স্তরায়ন বলতে কি বোঝ? উত্তর-মৃত্তিকার স্তরায়ন (soil profile): উপর থেকে নিচ পর্যন্ত মৃত্তিকার মধ্যে কতগুলো স্তর দেখতে পাওয়া যায় যেগুলি রাসায়নিক ও ভৌত উপাদান্গত দিক থেকে পরস্পর আলাদা কিন্তু উৎপত্তিগত দিক থেকে একে অপরের সঙ্গে একটি বিশেষ সম্পর্ক আছে । এই স্তরগুলিকে একত্রে মৃত্তিকার স্তরায়নবা মৃত্তিকার পরিলেখ বলে।
প্রশ্ন(২)চিত্রসহ মৃত্তিকার স্তরায়ন বা পরিলেখ soil profile আলোচনা করো। প্রশ্নের মান – ৫
উত্তর- মৃত্তিকার স্তরায়ন (soil profile)একটি মৃত্তিকায় স্তরায়নে বা পরিলেখে বা প্রস্থচ্ছেদে পাঁচটি স্তর দেখা যায়। যথা-(১) O স্তর বা জৈব স্তর (২) A স্তর বা খনিজস্তর এলুভিয়াল স্তর (৩) B স্তর বা সঞ্চয় স্তর ইলুভিয়াল স্তর (৪) C স্তর বা শিলা খন্ড স্তর (৫) D স্তর বা আদি শিলা খন্ড স্তর বা মাতৃ শিলা স্তর
……………………………………………………………………………………………………………………………………………
(১ ) O স্তর-এটি মৃত্তিকায় সবচেয়ে উপরে স্তর। তাই একে উর্ধ্ব মৃত্তিকা বলে ।এই স্তরে প্রচুর জৈব পদার্থ থাকায়। একে জৈব স্তর নামেও অভিহিত করা হয়। এই স্তরেই উদ্ভিদ জন্মায়।O স্তরকে দুটি উপবিভাগে ভাগ করা যায় ।
যথা-(ক) O1 (খ) O2
(ক) O1- এটি সর্ব উপরে অবস্থিত । এখানে উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহাবশেষ অপরিবর্তিত অবস্থায় সঞ্চিত থাকে। ফলে জৈব পদার্থের মূল প্রকৃতি ও উৎস সহজেই চিহ্নিত করা যায়। এর গভীরতা ১ – ২ ইঞ্চি। বিজ্ঞানীরা এই স্তরটিকে ‘L’ স্তর বলেছেন।
(খ) O2 – এটি O1- এর নিচে অবস্থিত । এখানে পচা জৈব পদার্থ বা হিউমাসের সঞ্চয় দেখা যায়, বিজ্ঞানীগণ একে ‘H’ স্তর নামে অভিহিত করেছেন।

(২) A স্তর- ‘O’- স্তরের নিচে ‘A’ স্তর অবস্থান করে ।এই স্তর থেকে প্রকৃতপক্ষে মূল মৃত্তিকারশুরু। এই স্তর খনিজ পদার্থের সমৃদ্ধ । ধৌত প্রক্রিয়ায় এই স্তর থেকে খনিজ ও জৈব পদার্থ অপসারিত হয় বলে একে বিধৌত স্তর বা অ্যালুভিয়াল স্তর বলা হয়। একে তিনটি উপস্তরে ভাগ করা যায় । যথা (ক) A1(খ)A2 (গ)A3
(ক) A1– জৈব ও অজৈব উভয় পদার্থ থাকে । এটি গাড়ো রঙের হয় ।
(খ)A2- লোহা অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড অপসারিত হয়ে যায় । তাই এই স্তর সাদা বা ধূসর রঙের হয়।
(গ)A3– ধৌত প্রক্রিয়া প্রভাব থাকলেও কিছু কিছু পদার্থ সঞ্চিত হয়।
(৩) B স্তর – A তারের নিচে B স্তর অবস্থিত। A স্তর থেকে বিধৌত পদার্থ এসে এই স্তরে সঞ্চিত হয়। তাই একে বিধৌত সঞ্চয় স্তর বা ইলুভিয়াল স্তর (Illuvial layer) বলা হয়। এখানে কাদা কনালৌহ অ্যালুমিনিয়াম ক্যালসিয়াম সালফেট অন্যান্য লবণ ইত্যাদি সঞ্চিত থাকে। স্তরকে তিনটি উপস্তরের ভাগ করা যায় যথা –
(ক) B1 (খ) B2 এবং (গ) B3
(ক) B1- হিউমাস , লৌহ , অ্যালুমিনিয়াম সঞ্চিত হয়।
(খ) B2- লোহা ক্যালসিয়াম কার্বনেট কর্দম সঞ্চিত হয়।
(গ) B3- বৃষ্টিপাত বেশি হলে জল এই স্তরে পৌঁছায় এবং খনিজের সঞ্চয় ঘটে।
(৪)C স্তর – B স্তরের নিচে অবস্থিত C স্তর মৃত্তিকার উৎস স্তর নামে পরিচিত। আবহবিকার দ্বারা সৃষ্ট শিলাচূর্ণ দিয়ে এই স্তর গঠিত। একটি উদ্ভিদের বিশেষ কাজে লাগে না। এটি অনুর্বর স্তর __
(৫) D স্তর – এটি আদি শিলা বা মাতৃশিলা স্তর নামে পরিচিত ।এর উপর মৃত্তিকার প্রকৃতি নির্ভর করে। যেখানে যে ধরনের আদি শিলা সেখানে সেই ধরনের মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়।
মৃত্তিকা সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা (Soil conservation and management)
প্রশ্ন(১) মৃত্তিকা ক্ষয় (Soil Erosion) কাকে বলে ? প্রশ্নের ২
উত্তর- প্রাকৃতিকভাবে এবং মূলত মানুষের কাজকর্ম ও হস্তক্ষেপের ফলে যখন শীর্ষস্তরের মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, মাটির
ভৌত-জৈব রাসায়নিক গুণ বা ধর্ম বিনষ্ট হয়, তখন তাকে সাধারণভাবে মৃত্তিকাক্ষয় বলে।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………
প্রশ্ন(২) মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ লিখ । প্রশ্নের মান-৩
উত্তর- মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ – মৃত্তিকা ক্ষয়ের দুটি কারণ আছে যথাঃ- (A)প্রাকৃতিক কারণ ও
(B) অপ্রাকৃতিক কারণ
(A)প্রাকৃতিক কারণ :
|(i) প্রবাহমান জলধারা -জলপ্রবাহ দ্বারা মৃত্তিকা বিভিন্নভাবে ক্ষয় হয়। যেমন •
(ক) পাতক্ষয় (Sheet Erosion)-প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে মৃত্তিকার উপরিস্থিত কাদাময় তরল অংশ ধুয়ে যাওয়াকে পাতক্ষয় বলে।
(খ)নালি ক্ষয় (Rill Erosion) পাতক্ষয়ের জলধারা একত্রিত হয়ে সরু সরু খাত বা নালির সৃষ্টি করে। এই নালির মধ্যে দিয়ে জলের স্রোত মৃত্তিকাকে ক্ষয় করে, যাকে নালি ক্ষয় বলে।
(গ)খাতক্ষয় (Gully Erosion)- ছোটো ছোটো জলধারা দ্বারা মাটি ক্ষয়ের ফলে যখন বৃহৎ আকারে যাতের সৃষ্টি হয়, তখন তাকে খাতক্ষয় বলে।
(ii)বায়ুপ্রবাহ : শুষ্ক মরু বা মরুপ্রায় অঞ্চলে প্রবল বায়ুপ্রবাহের আঘাতে ক্ষয় হলে তাকে বায়ুপ্রবাহের দ্বারা ক্ষয় বলে ।
( iii) বৃষ্টিপাত – মৃত্তিকাক্ষয়ের একটি প্রধান কারণ হল বৃষ্টিপাত। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, স্থায়িত্ব ও ফোটার আকার এবং গতিবেগের ওপর মাটি ক্ষয় নির্ভর করে।
(iv) ভূপ্রকৃতি -কোনো স্থানে ভূপ্রকৃতির ধরণ ( ভূমির বন্ধুরতা, ঢাল প্রভৃতি) মৃত্তিকা ক্ষয় করতে সাহায্য করে। যেমন- সমভূমি অঞ্চলে ভূমিঢাল কম কিন্তু পার্বত্য বা মালভূমি অঞ্চলে ভূমি ঢাল বেশি, তাই সমভূমি অঞ্চলের তুলনায় পার্বত্য কিংবা মালভূমি অঞ্চলে মুক্তিকা ক্ষয়ের মাত্রা বেশি হয়।
(B) অপ্রাকৃতিক কারণ :
(i) জনসংখ্যার চাপ : ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বনভূমি ধ্বংস করে শহর, নগর তৈরি করার ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় বেশি পরিমাণে হয় ।
(ii) অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ : অবৈজ্ঞানিকভাবে পশুচারণের ফলে পশুদের পায়ের চাপে তৃণভূমি নষ্ট হয় ও মাটি ক্ষয়ের সুবিধা হয়।
(iii)অবৈজ্ঞানিক খনন -বিভিন্ন খনিজ সম্পদ ভূ-গর্ভ থেকে আহরণের জন্য অনেক ক্ষেত্রে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খনন করা হয়। যেমন— কয়লা আহরণের ক্ষেত্রে খনি থেকে কয়লা তুলে নেওয়ার পর সেই খনিটিকে ভরাট না-করে ফেলে রাখলে সেখান থেকে বেশি মাত্রায় মাটি ক্ষয় এমনকি দুর্ঘটনা পর্যন্ত ঘটতে পারে।
(iv )ভূমিধস : পার্বত্য অঞ্চলে ধাপ কেটে জঙ্গল পরিষ্কার করে ঝুমচাষ পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করলে ভূমিধসের মাধ্যমে ভূমিক্ষয় হয়। এ ছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে সড়কপথ কিংবা রেলপথ নির্মাণ করলে ভূমির ধস নামে। যেমন- হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে বর্ষাকালে ভূমিধস একটা সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
(v) বৃক্ষচ্ছেদন : উদ্ভিদ তার শেকড়ের দ্বারা মাটিকে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখে। বর্তমানে বেশিমাত্রায় বৃক্ষচ্ছেদনের ফলে ভূমিক্ষয়-এর মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
(vi) প্রথাগত কৃষিপদ্ধতি : অবৈজ্ঞানিকভাবে ভূমি কর্ষণ, ধাপ চাষ, বছরের পর বছর একই ফসলের চাষ ভূমিক্ষয় ঘটাতে সাহায্য করে।
(vii) ইট ভাটা- ইট ভাটায় যেখানে ইট তৈরি হয়, সেখানে ব্যাপক মাত্রায় মাটি ক্ষয় হয়
……………………………………………………………………………………………………………………………………………
প্রশ্ন(৩)- মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব লেখ । প্রশ্নের মান -৩
• প্রত্যক্ষ প্রভাব :
মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস: মৃত্তিকার ক্ষয়ের ফলে মাটির উপরের স্তরের খনিজ, জৈবপদার্থ এবং পুষ্টি মৌলের অপসারণ ঘটে ও মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়।
কৃষিজমির গুণগত মানের অবনতি: মাটির ক্ষয়ের ফলে কৃষিজমির গুণগত মান হ্রাস পায়।
জলাশয় ভরাটকরণ : মাটি ক্ষয় পেয়ে নিকটস্থ জলাশয়ে সঞ্চিত হলে জলাশয়টি ভরে যায়
পুষ্টিমৌলের ঘাটতি; বিভিন্ন পুষ্টিমৌলের (অপসারণ ঘটলে উদ্ভিদের ক্ষেত্রে পুষ্টিমৌলের অভাব ঘটে।
• পরোক্ষ প্রভাব:
(i) বন্যা সৃষ্টি: মাটি ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়জাত পদার্থ নিকটস্থ নদীখাতে জমা হলে নদীর নাব্যতা কমে গিয়ে বন্যা সৃষ্টি হয়। (ii)চড়া সৃষ্টি : ক্ষয়িত পলি সঞ্চিত হয়ে নদীতে চড়া সৃষ্টি হয়।
(iii) বায়ুদূষণ : মাটি কণা, লবণ কণা ইত্যাদি বায়ু দ্বারা অপসারিত হওয়ায় বায়ুদূষণ ঘটে।
প্রশ্ন(৩)-মৃত্তিকা সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কাকে বলে? মৃত্তিকা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা লিখ ।
উত্তর-•মৃত্তিকা সংরক্ষণ: মৃত্তিকা সম্পদকে ক্ষয় ও অবনমনের হাত থেকে রক্ষা করা এবং জমির উর্বরাশক্তির পুনরুদ্ধার এবং জমির ব্যবহারযোগ্যতা বৃদ্ধি করাকে মৃত্তিকা সংরক্ষণ বলে।মৃত্তিকা সংরক্ষণের জন্য যে বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় তাকে মৃত্তিকা সংরক্ষণের ব্যবস্থাপনা(soil conservation management) বলে ।
মৃত্তিকা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা– মৃত্তিকা জীবজগতের কাছে অমূল্য সম্পদ।তাই এই সম্পদ রক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন ।
মৃত্তিকার উর্বরতা – মৃত্তিকার উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা যাতে ঠিক থাকে তার জন্য মৃত্তিকা সংরক্ষণের একান্ত প্রয়োজন।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ-ভূমিক্ষয় বা মৃত্তিকা ক্ষয় বন্যা সৃষ্টির একটি বিশেষ কারণ। তাই বন্যার হাত থেকে বাঁচতে হলে মৃত্তিকা সংরক্ষণের দরকার আছে ।
মরুভূমির প্রসার রোধ–মৃত্তিকা সংরক্ষণের মাধ্যমে মরু অঞ্চলের প্রচার রোধ করে মরুকরণ হ্রাস করা সম্ভব ।
ভূমিধস নিয়ন্ত্রণ-মৃত্তিকা সংরক্ষণের মাধ্যমে ভূমিধসের প্রবণতাকে কমানো যায় ।
বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য-মৃত্তিকা সংরক্ষণ এর মাধ্যমে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব ।
প্রশ্ন(৪) মৃত্তিকা সংরক্ষণের বিভিন্ন উপায়গুলি বা ব্যবস্থাপনা আলোচনা করো ।
মৃত্তিকা ক্ষয় প্রতিরোধ ও সংরক্ষণের প্রধান উপায়গুলি হল-
(১) বৃক্ষরোপণ (Afforestation): কৃষিজমির বিস্তার, নগরায়ণ প্রভৃতির ফলে একদিকে যেমন বনভূমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে মৃত্তিকা ক্ষয় বেড়ে যাচ্ছে। এইজন্য মৃত্তিকা সংরক্ষণের জন্য নতুন নতুন বনসৃজন” বৃক্ষরোপণ প্রয়োজন।
(২) ধাপ চাষ (Terrace Farming) :পাহাড়ের ঢালে বিভিন্ন উচ্চতায় সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে সমতল ভূমি তৈরি করে প্রান্তভাবে বাঁধের ব্যবস্থা করে আড়াড়াড়িভাবে ফসলকে সারি করে রোপণ করা হয়। এর ফলে ফসল উৎপাদন ও মৃত্তিকা সংরক্ষণ উভয় কাজই সুষ্ঠুভাবে করা যায়।
(৩) সমোন্নতিরেখা চাষ (Contour ploughing) : পার্বত্য উপত্যকার ঢালু জমিতে সমান উচ্চতা বরাবর ঢালের আড়াড়িভাবে কৃষিকাজ করাকে সমোন্নতিরেখা চাষ বলে। এর ফলে পাত বা নালিক্ষয় রোধ করে মৃত্তিকা সংরক্ষণ করা যায়।
(৪) ফালি চাষ (Strip cropping) : উদ্ভিদহীন ঢালু জমিতে জলের প্রবল গতির কারণে মাটি ক্ষয় বেশি হয় । এজন্য ঢালের আড়াআড়ি দিকে চওড়া ফালির মতো জমি তৈরি করে বিভিন্ন প্রকার ফসল চাষ করলে মাটি ক্ষয় রোধ করা হয়।
(৫) গালি চাষ (Gully ploughing) : প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে মৃত্তিকা ক্ষয়ের দ্বারা যে-চওড়া খাত বা গালির সৃষ্টি হয় সেখানেপ্রবাহ ও ক্ষয় কমানোর জন্য কয়েকটি বাঁধ পর পর তৈরি করে চাষ করলে চাষের সঙ্গে সঙ্গে গালিক্ষয় রোধ করা সম্ভব।
(৬) ঝুম চাষ রোধ : উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে পাহাড়ের ঢালে জঙ্গল কেটে ও পুড়িয়ে চাষ করাকে ঝুম চাষ বলে। এই পদ্ধতিতে একবার চাষ করার পর পুনরায় সেখানে চাষ করা যায় না। বলে অন্যত্র সরে গিয়ে একই পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। এই ঝুম চাষ রোধ করে মৃত্তিকা সংরক্ষণ করা যায়।
(৯)পরিণত ও অপরিণত মৃত্তিকা(Mature and Immature soil) তিনটি পার্থক্য লিখ । (3)
।বিষয় | পরিণত মৃত্তিকা | অপরিণত মৃত্তিকা |
আদি শিলার অবস্থান | পরিণত মৃত্তিকায় আদিশিলার অবস্থান দেখা যায় না । | অপরিণত মৃত্তিকয় আদিশিলার অবস্থান দেখা যায় । |
প্রকৃতি | এরূপ মৃত্তিকা দৃঢ় ও সুসংবদ্ধ হয় । | এরূপ মৃত্তিকা দৃঢ় ও সুসংবদ্ধ নয় ।ভঙ্গুর প্রকৃতির হয় |
পরিলেখ | সুস্পষ্ট মৃত্তিকা পরিলেখ চোখে পড়ে । | মৃত্তিকা পরিলেখ সুস্পষ্ট নয়। |
ধর্ম | ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তন হয় না | ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তন হয়। |
গঠন প্রক্রিয়া | গঠন প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়ে যায় । | গঠন প্রক্রিয়া চলতে থাকে । |
(১০)পেডালফার ও পেডোক্যাল মৃত্তিকার (Pedalfer and Pedocal) তিনটি পার্থক্য লিখ । (3)
বিষয় | পেডালফার মৃত্তিকা | পেডোক্যাল মৃত্তিকা |
উপাদান | এই মৃত্তিকা অ্যালুমিনিয়াম ও লোহা দ্বারা গঠিত।এতে লোহা অ্যালুমিনিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে | এই মৃত্তিকা চুন দ্বারা গঠিত। এতে ক্যালসিয়াম কার্বনেট এর প্রাধান্য দেখা যা। |
অঞ্চল | এটি আর্দ্র অঞ্চলের মৃত্তিকা । | এটি শুষ্ক অঞ্চলের মৃত্তিকা। |
প্রকৃতি | এটি আম্লিক প্রকৃতির । | এটি ক্ষারকীয় প্রকৃতির । |
PH-মান | PH-মান ৭ এর কম । | PH-মান ৭ এর বেশি । |
উদাহরণ | ল্যাটেরাইট,পডজল ইত্যাদি । | চেস্টনাট,চারনোজেম ইত্যাদি । |
……………………………………………………………………………………………………………………………………………
(১১)এলুভিয়েশন ও ইলুভিয়েশনের (Eluviation and Illuviation) তিনটি পার্থক্য লেখ । (3)
বিষয় | এলুভিয়েশন স্তর | ইলুভিয়েশন স্তর |
প্রক্রিয়া | ধৌতকরণের মাধ্যমে এই স্তর গঠিত হয় । | সঞ্চয়নের মাধ্যমে এই স্তর গঠিত হয়। |
অবস্থান | এটি মৃত্তিকার উপরের স্তর | এটি নিচের স্তর |
অপর নাম | এই স্তরটি A স্তর নামে পরিচিত | এই স্তরটি B স্তর নামে পরিচিত |
খনিজের উপস্থিতি | খনিজের অপসারণ ঘটে ফলে স্তরটি খনিজশূণ্য হয়ে পড়ে । | খনিজ পদার্থ সঞ্চিত হয় |
মৃত্তিকার রং | মৃত্তিকার রঙ হালকা হতে থাকে | মৃত্তিকার রঙ গাঢ় হতে থাকে |