জলবায়ু (climate)/XII/ 3rd sem
syllabus:
(A) বায়ুমন্ডলে জল- (I) ঘনীভবন ও তার উৎপত্তি, প্রকারভেদ
(III) অধঃক্ষেপণ ও তার উৎপত্তি, প্রকারভেদ
(A) Water in atmosphere
(I) Condensation :- Formation and types
(II) Precipitation:- Formation and types
(১) জল বায়ুমন্ডলের অন্যতম উপাদান।
(২) বায়ুমন্ডলে জল তিনটি অবস্থায় রূপান্তরিত হয় যথা- কঠিন, তরল, গ্যাসীয়।
(৩) তাপমাত্রা ০° সেন্টিগ্রেডের বেশি হলে জল কঠিন অবস্থা থেকে গলন প্রক্রিয়ায় তরলে পরিণত হয়।
(৪) তাপমাত্রা ১০০° সেন্টিগ্রেডে পৌছালে জল তরল অবস্থা থেকে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায গ্যাসীয় অবস্থায়
বা জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়।
(৫) তাপমাত্রা ১০০° সেন্টিগ্রেডের নীচে এবং ০⁰সেন্টিগ্রেডের উপরে থাকলে জলীয়বাষ্প ঘনীভবন
প্রক্রিয়ায় পুনরায় তরলে পরিণত হয়। কিন্তু তাপমাত্রা 0⁰ বা তার কম হলে জল ঘনীভবন প্রক্রিয়ায়
কঠিন বা বরফে পরিণত হয়।
বায়ুমন্ডলে জলের বিভিন্ন রূপঃ
(I) জলীয় বাষ্প (water vapour)
(II) মেঘ (Cloud)
(III) বৃষ্টিপাত (Rainfall)
(IV) শিশির (dew)
(V) কুয়াশা (fog)
(VI) তুষার যা তুহিন (Frost)
জলীয় বাষ্প – জলের গ্যাসীয় অবস্থা।
মেঘ – আকাশে ভাসমান জলকণা।
বৃষ্টিপাত – ভাসমান জলকণার ভূপৃষ্ঠে পতিত হওয়া।
শিশির – শরৎকালে বা শীতের মেঘমুক্ত রাতে বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্প শীতল ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে
তাড়াতাড়ি ঘনীভূত হয়ে বিন্দু বিন্দু জলকণারূপে ঘাসে জমা হলে তাকে শিশির বলে।
কুয়াশা : ভূ-পৃষ্ঠের কাছাকাছি বাতাসে ভাসমান জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে যে সাদা সাদা মেঘের সৃষ্টি করে তাকেকুয়াশা বলে।
তুহিন : তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নেমে এলে ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন সম্পৃক্ত বাতাসের জল বরফ কণায় পরিণত হলে
তাকে তুহিন বলে।
ঘনীভবন (Condensation)-যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জলীয়বাষ্পে গ্যাসীয় অবস্থা থেকে জলকণায় বা তুষারকণায় পরিণত হয় তাকে ঘনীভবনবলে।
পিটারসনের মতে (pitterson) , যে প্রক্রিয়ায় জলীয় বাষ্প গ্যাসীয় অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় পরিণত
হয় তাকে ঘনীভবন বলে
বৈশিষ্ট্য :(১) বাষ্প থেকে তরলে পরিবর্তন : ঘনীভবন হলো বায়ুমন্ডলের জলীয় বাষ্প ঠান্ডা হয়ে জলকণায় পরিনতহওয়ার প্রক্রিয়া।
তাপমুক্তি ঘটে : এই প্রক্রিয়ায় জলীয় বাষ্প তরলে পরিণত হওয়ার সময় তাপ বিকিরণ করে যা বায়ুমণ্ডলকে
উওপ্ত করতে সাহায্য করে।
শীতল পৃষ্ঠের প্রয়োজন : ঘনীভবনের জন্য জলীয়বাষ্পকে একটি ঠান্ডা পৃষ্ঠের সংস্পর্শে আসতে হয়।
ধূলিকণা, গাছের পাতা, ঘাস।
(৪) আর্দ্রতা : বায়ুতে আর্দ্রতা বেশি থাকলে ঘনীভবনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
(৫) ফলাফল: ঘনীভবনের ফলে শিশির, কুয়াশা, মেঘ ইত্যাদি সৃষ্টি হয়।
ঘনীভবনের নিয়ন্ত্রক বা শর্ত (controlling factors or conditions for condensation)
ঘণীভবনের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলি থাকা প্রয়োজন যেগুলি ঘনীভবনের নিয়ন্ত্রক নামে পরিচিত।
(১) ঠান্ডা বা শীতলীকরণের মাত্রা (Amount of cooling)-বায়ু যত তাড়াতাড়ি শীতল বা ঠান্ডা হবে
ঘনীভবন প্রক্রিয়া তত তীব্রতর হবে।
(২) আপেক্ষিক আর্দ্রতা (Relative Humidity)-ঘনীভবনের জন্য বায়ুতে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৯৫% – ১০০% হওয়া প্রয়োজন।কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতা ও চাপে নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প থাকে ( চরম আর্দ্রতা)এবং ওই একই উষ্ণতা ও চাপে একই আয়তনের বায়ুকে সম্পৃক্ত করার জন্য যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প প্রয়োজনতাদের পরিমানের অনুপাতকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে।
নির্দিষ্ট উষ্ণতায় ও চাপে নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে প্রকৃত
জলীয় বাষ্পের পরিমাণ
আপেক্ষিক আর্দ্রতা=———————————————————- 100
এই বায়ুকে সম্পৃক্ত করার জন্য প্রকৃত জলীয় বাষ্পের
পরিমান
মনে করা যাক 20°c উষ্ণতায় 1 ঘনমিটার বায়ুতে জলীয় বাষ্প আছে 12 গ্ৰাম। এই উষ্ণতার ওই বায়ুকে
সম্পৃক্ত করতে হলে 24 গ্রাম জলীয়বাষ্প, দরকার।
:- আপেক্ষিক আর্দ্রতা = 12/24 100 = 50%
(৩) বায়ুর উষ্ণতা : (Air temperature):শীতকালে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি চরম আর্দ্রতা কম।
বায়ুর উষ্ণতার উপর ঘণীভবন নির্ভরশীল বায়ুর উষ্ণতা কমে গেলে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেড়ে যায়, বাতাস
সম্পৃক্ত হতে শুরু করে এবং, ঘনীভবন প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়।
(৪) জলাকর্ষী কণার কেন্দ্রীভবন concentration of (hygroscopic nuclei)→ ঘনীভবনের জন্য জলাকর্ষীকণার উপস্থিতি থাকা প্রয়োজন। বায়ুমন্ডলে ভাসমান বিভিন্ন ধূলিকণা, লবণকণা,
অগ্ন্যুদগমজাতকনা ইত্যাদি জলাকর্ষী কণা।
(৫)শিশিরাঙ্ক তাপমাত্রা :- যে উষ্ণতায় জলীয় বাষ্প জলকণায় পরিণত হয় তাকে শিশিরাঙ্ক তাপমাত্রা (dew
point temperature) বলে।
ঘনীভবনের ধাপ(step of condensation) :- ঘনীভবনের ধাপ গুলি হল –
(১) বাষ্পী ভবন :– সূর্যের তাপে নদী, সাগর হ্রদ, জলাশয় এবং মৃত্তিকার জল বাস্পে পরিণত হয়।
(২) বায়ুমন্ডলে উত্তরণ :- জলীয় বাষ্প হাল্কা হওয়ায় তা উপরে উঠে যায়।
(৩) তাপমাত্রা হ্রাস ও শীতলীকরণ :– উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ু ও জলীয়বাস্প ঠান্ডা হতে শুরু করে।
(৪) ঘণীভবনের সূচনা :– নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয়।
(৫) ঘনীভবনের কেন্দ্র :- ধূলিকণা, লবণকণাকে কেন্দ্র করে জলকণা আকাশে ভাসতে থাকে।
(৬) মেঘ ও কুয়াশা; সৃষ্টি :- অসংখ্য জলকণা একত্রিত হয়ে মেঘ বা কুয়াশা সৃষ্টি করে
ঘণীভবনের প্রক্রিয়া (process of condensation)
ঘনীভবন দুটি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়।
(১) রুদ্ধতাজ বা অ্যাডিয়াবেটিক প্রক্রিয়া (Adiabatic process) :- যে প্রক্রিয়ায় বায়ুমন্ডলের মধ্যেতাপের সংযোজন বা বিয়োজন না ঘটিয়ে শুধু আয়তন বৃদ্ধির জন্য বায়ুর শীতলীকরণ হয় তাকেঅ্যাডিয়াবেটিক বা তাপ বিযুক্তি প্রক্রিয়া বলে।
অ্যাডিয়াবেটিক শীতলীকরণ দুভাবে হয়-
(ক) ভূ-পৃষ্ঠস্থ বায়ুর চাপ হ্রাস :– ভূ-পৃষ্ঠস্থ বায়ুর উপর চাপ হ্রাস পেলে কোনো প্রকার তাপ বিনিময় ছাড়াইবাতাস শীতল হয়ে পড়ে ও ঘনীভবন শুরু হয়।
(খ) বায়ুর উত্থান : বাতাস উপর দিকে উত্থিত হলে আয়তনে প্রসারিত হয় এবং ক্রমশপদার্থ উষ্ণতা পদ্ধতি পদার্থের রূপান্তরিত
(২) নন অ্যাডিয়াবেটিক বা ডায়াবেটিক বা তাপসংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া (Non-Adiabatic or Diabatic process) যে প্রক্রিয়ায় বায়ুর আয়তনের কোনো পরিবর্তন না হয়ে তাপে বিযুক্তিকরণের কারণে শীতলীকরণ ঘটে তাকেনন অ্যাডিয়াবেটিক অথবা ডায়াবেটিক (Non-Adiabatic or Diabatic process) বা তাপ-সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়াবলেএর তিনটি পদ্ধতি আছে। যথা :-
(১) বিকিরণের মাধ্যমে শীতলীকরণ ও ঘনীভবন :-
কারণ:-(a) রাত্রে ভূ-পৃষ্ঠ তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়।
(b) ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু সম্পৃক্ত হয়ে যায়।
(c) ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন বাতাসে ধূলিকণা বেশি থাকায় তাদেরকে ভিত্তি করে ঘনীভবন সংঘঠিত।
ফল :- এই জাতীয় ঘনীভবনে শিশির, তুহিন কুয়াশা প্রভৃতির সৃষ্টি হয়।
(II) শীতল ভূমিভাগের সংস্পর্শে ঘনীভবন
কারণ :-(a) রাতে ভূমি ভাগ তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়।
(b) ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর শীতল হয়।
ফল:- শিশির, কুয়াশা, তুহিন ইত্যাদির সৃষ্টি হয়।
(III) শীতল বাতাসের সঙ্গে মিশ্রণজনিত ঘনীভবন
কারণ:- (a) উষ্ণ-আর্দ্র বায়ু শীতলবায়ুর সংস্পর্শে এসে ঠান্ডা হয় এবং সম্পৃক্ত হয়ে ঘনীভবন ঘটে ।
ফল:- মেঘ , কুয়াশা সৃষ্টি হয়
ঘনীভবনের বিভিন্ন রূপ (Formation of Condensation)
ভূ-পৃষ্ঠের নিকট ঘনীভবন
(A) শিশির (Dew)
(B) তুহিন (Frost)
(C) কুয়াশা (Fog)
(D) কুজ্ঝটিকা(Mist) বা কুহেলিকা
(E) ধোঁয়াশা (smog)
(A) শিশির (Dew)
(I) ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থিত ঘাস, লতা পাতা ইত্যাদির উপর সঞ্চিত ঘনীভূত অতিক্ষুদ্রজলকণা হল শিশির ।
(II) শিশিরের জন্য নির্মল ও মেঘমুক্ত আকাশ প্রয়োজন।
(III) দীর্ঘ রাত, শাস্ত বায়ু শিশির গঠনে উপযোগী।
(IV)শিশির গঠনের জন্য আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৯০%-১০০% হওয়া দরকার ।শিশির গঠনের জন্য শিশিরাঙ্ক দরকার অর্থাৎ শিশির তখনই গঠিত হয় যখন বাতাসের তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে শিশিরাকে (dew point) পোঁছে যায়।শিশিরঙ্ক হল এমন এক সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যা বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্পকে ঘণীভূত করে তরলে পরিণত করতে সাহায্য করে। অর্থ্যাৎ শিশিরাঙ্ক হল বাতাসে জলীয় বাস্প ঘনীভবনের তাপমাত্রা।
মনে কর- বাতাসের বর্তমান তাপমাত্রা 25°C এবং. শিশিরাঙ্ক 18°C । যদি বাতাস ঠান্ডা হয়ে 18°C পৌঁছে যায় তখন বাতাসে থাকা অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ঘনীভবন হতে শুরু এবং শিশির জমা হবে।
(B) তুহিন (Frost)
(I) ভূ-পৃষ্ঠে জমাট বাঁধা ক্ষুদ্রকণাবিশিষ্ট তুষার কেলাস, হল তুহিন।
(II) তুহিন গঠনে তাপমাত্রা 0°C বা তার নিচে হতে হবে (হিমাঙ্ক বা তার নিচের তাপমাত্রা)
(III) আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৯০% – ১০০% প্রয়োজন হয়।
তুহিনের প্রকারভেদ-(I) ভূমি তুহিন ( Ground Frost) -ভূপৃষ্ঠে সৃষ্টি হয়।
(II) উদ্ভিদ পৃষ্ঠ তুহিন (Grass Frost) ঘাসের উপর সৃষ্টি হয়।
(III) বায়ুস্থিত তুহিন (Ain Frost) -বায়ুমন্ডলে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন এলাকার সৃষ্টি হয়।
(IV) শুভ্র তুহিন বা সাদা তুহিন (White Frost) পেঁজার তুলার মত দেখা যায়।
(C) কুয়াশা (Fog)
কুয়াশা সৃষ্টি জন্য মেঘমুক্ত দীর্ঘ রাত, শান্ত আবহাওয়া, জলীয়বাষ্প পূর্ণ আর্দ্র-বায়ু ধূলিকণা বা জলাকর্ষী কণা
ইত্যাদি প্রয়োজন।
কুয়াশার শ্রেণিবিভাগ:
(I) ভূমি কুয়াশা বা বিকিরণজনিত কুয়াশা :- শীতল ভূমিভাগের উপর জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু স্থিরভাবে
অবস্থান করলে শীতল বায়ুর সংস্পর্শে বায়ু উষ্ণতা হ্রাস পেয়ে যে কুয়াশার সৃষ্টি হয় তাকে ভূমি কুয়াশা বাল
(II) সীমান্ত কুয়াশা :– দুটি ভিন্নধর্মী বায়ুপুঞ্জের ( উষ্ণ আদ্র বায়ু ও শীতল শুষ্ক বায়ু ) সীমান্ত অংশে
যে কুয়াশার সৃষ্টি হয় তাকে সীমান্ত কুয়াশা বলে।
(D) কুহেলিকা বা কুজ্ঝটিকা (mist) :-
কুয়াশা যখন অত্যন্ত ঘন হয় তখন এক ধরনেরঅস্বচ্ছ আবরণ সৃষ্টি হয়। জলাভূমি, হ্রদ, নদী বা জলাশয়ের উপর জমে থাকা একধরনের কুয়াশার অস্বচ্ছ আবরণকে কুহেলিকা যা কুজ্ঝটিকা বলে।
(E) ধোঁয়াশা (smog) :-
ধোঁয়া এবং কুয়াশা একসাথে অবস্থান করলে তাকে ধোঁয়াশা বলে।smog = smoke + fog
শহরাঞ্চল ও শিল্পকারখানা এলাকায় প্রাপ্ত ধূলিকনা, কার্বন কনা, সালফার ডাই অক্সাইড ইত্যাদি জলাকর্ষী কণাকে আশ্রয় করে কুয়াশা যখন ভেসে বেড়ায় তখন ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। ধোঁয়াশা সৃষ্টি হলে চোখ
জ্বালা করে।
ভূ-পৃষ্ঠের উপর অথাৎ উদ্ধাকাশে ঘনীভবন
(I) মেঘ (cloud):- (a) মেঘ হল বায়ুমণ্ডলে ভাসমান জলকণা বা তুষারকণার সমষ্টি।
(b) উর্দ্ধাকাশে ঘণীভবনের অন্যতম রূপ হল মেঘ l
(c) ধূলিকণাকে আশ্রয় করে আকাশে মেঘ ভেসে বেড়ায়।
(d) অধঃক্ষেপণ সৃষ্টিতে মেঘের গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। অর্থাৎ মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত, তুষারপাত,
শিলাবৃষ্টি, হয়ে থাকে।
(e) মেঘমুক্ত রাত্রি মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি অপেক্ষা শীতল হয়।
(f) জলীয় বাষ্পপূর্ণ আদ্র বায়ু উর্দু আকাশে শীতল বায়ু সংস্পর্শে এলে ঘনীভূত হয়ে মেঘের সৃষ্টি করে।
(g) আকাশে কি পরিমান মেঘ আছে তার পরিমাপকে মেঘাচ্ছন্নতা বলে (cloud cove. )
(h) সম্পূর্ণ পরিষ্কার আকাশ থাকলে তার মেঘাচ্ছন্নতা 0% হয়। এবং আকাশ সম্পূর্ণ মেঘে ঢাকা থাকলে তার মেঘাচ্ছণ্ণতা 100% হয়।
(i) মেঘের পরিমাণ কত তা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহারিক ভূগোল চিহ্নের প্রচলন আছে। আকাশে
মেঘাচ্ছন্নতার হিসাব অক্টাস দ্বারা পরিমাপ করা হয়। অর্থাৎ একটি বৃত্তকে আট অংশে ভাগ করে
মেঘাচ্ছন্নতার হিসাব দেখানো হয়। যেমন- ¼ ভাগ , ⅛ ভাগ
(j) মেঘাচ্ছন্নতা পরিমাপক যন্ত্রের নাম নেফেলোমিটার।
মেঘের শ্রেণিবিভাগ
আন্তজাতিক মেঘ মানচিত্র অনুযায়ী মেঘের শ্রেণিবিভাগ।
(A) উচ্চ আকাশের মেঘ (6000 – 12000 মিটার উচ্চতায় )
(a) সিরাপ (cirrus)- (i) এই মেঘ অলক মেঘ নামে পরিচিত। এর রং সাদা ও স্বচ্ছ প্রকৃতির।
তাই মেঘের ভেতর দিয়ে সূর্য ও চন্দ্রকে দেখা যায়। এই মেঘ দেখতে পাখির পালকের মতো। সুক্ষ
তুষার কনা দ্বারা গঠিত হওয়ার জন্য একে অশ্বিনী পুচ্ছ বলা হয়। আবহাওয়া পরিষ্কার থাকে।
(B) সিরোস্ট্যাটাস (cirrostratus): – একে অলক স্তর মেঘ বলে। স্বচ্ছ সাদা রং, বর্ণবলয় দেখা যায়। পাতলাসাদা চাদরের মতো দেখতে অনেক সময় ছায়াপথের মতো দেখতে হয়। সূর্যকে অনুজ্জ্বল দেখায়। এই মেঘ ঝড়ের সংকেত বহন করে।
(c) সিরোকিউমুলাস (cirrocumulus Cloud):– এই মেঘ অলক স্তূপ মেঘ নামে পরিচিত। এই মেঘ পেঁজাতুলার মতো, ম্যাকারেল মাছের পিঠের মতো দেখতে হওয়ায় এই মেয়ে ঢাকা আকাশকে ম্যাকারেল আকাশ বলে।তুষার কনা দ্বারা গঠিত এই মেঘ ঢেউয়ের মতো আকাশে ভেসে বেড়ায়।পরিষ্কার আবহাওয়া নির্দেশ করে। সূর্যাস্তের সময় সূর্যের লাল রঙকে প্রতিফলিত করে।
(B) মধ্য আকাশের মেঘ- (2000-6000 মিটার)
(I) অল্টো কিউমূলাস (Alto cumulus) -এই মেঘ মধ্যম উঁচু স্তূপ মেঘ নামে পরিচিত। এর রঙ সাদা ও ধূসরবর্ণের। আকাশে এই মেঘ রেখা বা ঢেউয়ের মতো অবস্থান করে। মেঘের আকৃতি গম্বুজের মতো হয় । কখনো কখনো ঝড়বৃষ্টি হয়।
(III) অল্টোস্ট্র্যাটাস (Altostratus): এই মেঘ মধ্যম উচ্চ স্তর মেঘ নামে পরিচিত। কখনো ধূসর বা কখনো
নীলাভ রঙের হয় । জলকণার পরিমাণ বেশি থাকা একে অতিশীতল জলপূঞ্জ মেঘ বলে। এর দ্বারা ঝিরঝিরে
বৃষ্টি হয়।
(C) নিম্ন আকাশের মেঘ (0 – 2000 মিটার)
(I) স্ট্যাটাস (stratus):- এই মেয়ে স্তর মেঘ নামে পরিচিত । কুয়াশার মতো দেখতে। ধূসর বর্ণ যুক্ত।
আকাশকে চাদরের মতো ঢেকে দেয়। ঝিরঝিরে বৃষ্টি হয়। অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
(II) নিম্বো স্ট্র্যাটাস(Nimbostratus):- এই মেঘ বাদল স্তর মেঘ নামে পরিচিত। রং গাঢ় কালো। ঘন ও পুরুস্তর যুক্ত। অবিরাম বৃষ্টি হয়।
(III) কিউমুলাস(cumulus):- এই মেয়ে স্তূপ মেঘ নামে পরিচিত। এই মেঘ ঘন ও পুরু। অনেকটা ফুলকপির মতো দেখতে। কখনো কখনো ঝড় বৃষ্টি হয়।
(IV) স্ট্র্যাটোকিউমুলাস(stratocumulus):- এই মেঘ নিচু আকাশে স্তূপ মেঘ নামে পরিচিত। ঘন ও ভারী।মেঘের তলদেশ সমতল। শীতকালে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টি হয়।
(V) কিউমুলোনিম্বাস(cumulonimbus):- এই মেঘ বজ্র মেঘ নামে পরিচিত। খুব ঘন , উলম্ব বিস্তার অনেক বেশি। প্রচুর ঝড় বৃষ্টি শিলাবৃষ্টি হয়।
অধঃক্ষেপণ (precipitation)
(১) অধঃ কথার অর্থ নীচে এবং ক্ষেপন কথার অর্থ হল পতিত হয়। সুতরাং অধঃক্ষেপণ = নীচে পতিত হয়।
(২) জলকণা তরল কিংবা কঠিনরূপে ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হলে তাকে অধঃক্ষেপণ বলে।
(৩) অধঃক্ষেপনের মূল কারন ঘনীভবন।
(8) অধঃক্ষেপণ = বাষ্পীভবন + ঘণীভবন + অধঃপতন
(৫) ঘনীভবন ও অধঃক্ষেপণের পার্থক্য
ঘনীভবন | অধঃক্ষেপণ |
জলীয় বাষ্প যে প্রক্রিয়ায় শীতল ও ঘণীভূত হয়ে জলকণা ও তুষারকনায় পরিণত হয় তাকে ঘনীভবন বলে। | ঘনীভবনের ফলে সৃষ্ট মেঘ তরল কিংবা কঠিন রূপে ভূপৃষ্ঠে পতিত হলে তাকে অধঃক্ষেপণ বলে। |
ঘনীভবনের রূপ হলো মেঘ , কুয়াশা, তুহিন,শিশির ইত্যাদি | অধঃক্ষেপনের রূপ হল বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, স্লিট,শিলাবৃষ্টি |
মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কোন প্রভাব থাকে না। | মাধ্যাকর্ষণ শক্তি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। |
ঘনীভবন অধঃক্ষেপনের উপর নির্ভরশীল নয়। | আধঃক্ষেপণ ঘনীভবনের উপর নির্ভরশীল। |
এই প্রক্রিয়া বায়ুতে লীন তাপ যুক্ত হয়।বায়ুর উষ্ণতা শীতলীকরণের মাত্রা আপেক্ষিকআর্দ্রতা ঘনীভবনে প্রধান শর্ত। | কোন তাপ সৃষ্টি হয় না এই প্রক্রিয়ায়।সূর্যালোক, আর্দ্রতা, বায়ু প্রবাহ, মধ্যাকর্ষণ ইত্যাদি অধঃক্ষেপণের প্রধান শর্ত। |