নদীর, কার্য (Works of rivers,
■ নদীর কার্য (Works of rivers)■
• নদীর সংজ্ঞা (Definition of rivers): উচ্চ মালভূমি বা পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন প্রাকৃতিক জলধারা ভূমির ঢাল বরাবর প্রবাহিত হয়ে কোন সমুদ্র বা হ্রদে পতিত হলে তাকে নদী বলে। নদীর সৃষ্টি প্রধানত তিনভাবে হতে পারে- (১) বরফগলা জল থেকে (২) বৃষ্টির জল থেকে (৩) হ্রদ কিংবা ঝর্ণার জল থেকে।
• নদীর উৎস ও মোহনা (Source and mouth): যেখান থেকে নদীর সৃষ্টি হয়, তাকে নদীর উৎস বলে। যেখানে নদী সাগরে বা হ্রদে পতিত হয় তাকে নদীর মোহনা বলে। যেমন গঙ্গা নদীর উৎস গঙ্গোত্রী হিমবাহ এবং মোহনা বঙ্গোপসাগরের সাগরদ্বীপের নিকটবর্তী অঞ্চল।
• উপনদী ও প্র-উপনদী: স্বতন্ত্রভাবে উৎপন্ন কোন নদী অন্য নদীতে মিশলে, তাকে উপনদী এবং উপনদীর সঙ্গে মিলিত নদীকে প্র-উপনদী বলে। যেমন- গঙ্গার উপনদী যমুনা এবং প্র-উপনদী চম্বল।
• শাখানদী ও প্র-শাখানদী: যে নদী কোন নদী থেকে আলাদা হয়ে যায়, তাকে শাখানদী এবং শাখানদী থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া নদীকে প্র-শাখা নদী বলে। যেমন- ভাগীরথী ও হুগলী নদী হল গঙ্গার শাখানদী এবং মাতলা, গোসাবা ইত্যাদি গঙ্গার প্র-শাখানদী।
• নদী অববাহিকা (River Basin): প্রধান নদী, উপনদী, প্র-উপনদী, শাখা ও প্রশাখা নদী দ্বারা সৃষ্ট বিস্তৃত অঞ্চলকে নদী অববাহিকা বলে। যেমন- গঙ্গা নদীর অববাহিকা।
• নদী উপত্যকা (River Valley): উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদী যে অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাকে নদী উপত্যকা বলে।
• দোয়াব অঞ্চল: দুটি নদীর মধ্যবর্তী স্থানকে দোয়াব অঞ্চল বলে। যেমন- গঙ্গা ও যমুনা নদীর মধ্যবর্তী স্থানকে গঙ্গা ও যমুনা দোয়াব অঞ্চল বলে।
চিত্র- দোয়াব অঞ্চল:
• জলবিভাজিকা (Water shed): যে উচ্চভূমি দ্বারা দুটি নদী অববাহিকা বিভক্ত, তাকে জল বিভাজিকা বলে। যেমন- মধ্য ভারতের মালভূমি দাক্ষিণাত্য ও উত্তর ভারতের নদীগুলির জল-বিভাজিকা হিসেবে অবস্থিত।
• চিত্র- জলবিভাজিকা (Water shed):
• নদীর কাজ (Works of rivers) •
নদী তার গতিপথে ক্ষয়, বহন ও অবক্ষেপণ এই তিনপ্রকার কাজ করে। এই কাজগুলি নির্ভর করে নদীর ক্ষমতা বা শক্তির উপর। আবার নদীর শক্তি নির্ভর করে নদীর জলের পরিমাণ ও নদীর জলের গতিবেগের উপর। জলের পরিমাণ এবং গতিবেগকে একত্রে নদীপ্রবাহ বলে। নদী প্রবাহ মূলতঃ ভূমির ঢাল ও জল সরবরাহের উপর নির্ভরশীল। ভূমির ঢাল কিংবা জল সরবরাহের পরিমাণ বেড়ে গেলে নদীর শক্তিও বেড়ে যায়। পরীক্ষার সাহায্যে দেখা গেছে, নদীর গতিবেগ দ্বিগুণ বেড়ে গেলে নদীর বহন ক্ষমতা ৬৪ গুণ বেড়ে যায়। একে ষষ্ঠঘাতের সূত্র বলা হয়। কিউসেক (Cusec) ও কিউমেক হল নদী প্রবাহের একক। নদীখাতের একটি নির্দিষ্ট অংশ দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যত ঘনফুট জল প্রবাহিত হয় তাকে কিউসেক এবং প্রতি সেকেন্ডে যত ঘনমিটার জল প্রবাহিত হয় তাকে কিউমেক বলা হয়।
• নদীর ক্ষয়কাজ (Erosion): নদী চারটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষয়কাজ করে।
(i) জল প্রবাহ ক্ষয় (Hydraulic Action): জলস্রোতের প্রচন্ড আঘাতে নদীখাতের উভয়পার্শ্ব ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
(ii) অবঘর্ষ (Corrasion): নদীবাহিত শিলাখণ্ডের আঘাতে নদীখাত ক্ষয় হতে থাকে। (iii) ঘর্ষণ ক্ষয় (Attrition): নদীবাহিত শিলাখণ্ড পরস্পরের আঘাতে ছোট ছোট নুড়ি ও বালিতে পরিণত হয়।(iv) দ্রবণ (Solution): চুনাপাথর, জিপসাম, লবণ ইত্যাদি নদীর জলে গলে যায়।
নদীর ক্ষয়কাজের মাধ্যমে I ও V আকৃতির উপত্যকা, গিরিখাত, ক্যানিয়ন, জলপ্রপাত, নদীবাঁক বা মিয়েন্ডার, হাঁড়ির ন্যায় গর্ত বা পটহোল বা মন্থকূপ, কর্তিত শৈলশিরা ইত্যাদি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।
• নদীর বহন কাজ (Transportation): নদী চারটি প্রক্রিয়ায় বহন করে।
(i) লম্ফদান (Sattation): নদীস্রোতের প্রবলটানে কিছু কিছু শিলাখণ্ড নদীখাতে বারবার ধাক্কা খেয়ে লাফাতে-লাফাতে এগিয়ে চলে। (ii) ভাসমান (Suspension): ছোট ছোট শিলাচূর্ণ, বালুকা প্রভৃতি জলস্রোতে ভাসতে ভাসতে পরিবাহিত হয়। (iii) আকর্ষণ (Traction): বড় বড় শিলাখণ্ডগুলি নদীখাতে জলের আকর্ষণে গড়াতে গড়াতে এগিয়ে চলে। (iv) দ্রবণ (Solution): চুনাপাথর, জিপসাম, লবণ প্রভৃতি জলে দ্রবীভূত হয়ে পরিবাহিত হয়।
• নদীর অবক্ষেপণ বা সঞ্চয় কাজ (Deposition): নদী যতই সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যায় ততই তার বহন ক্ষমতা কমতে থাকে। নদীবাহিত বিভিন্ন নুড়ি, পাথর, বালি, কাদা, পলি ইত্যাদি নদীর দুপাশে, তলদেশে এবং মোহনার নিকটে জমা হতে থাকে। একে নদীর সঞ্চয়কাজ বলে। প্রধানত চারটি কারণে নদী সঞ্চয় করতে বাধ্য হয়। যথা -(i) জলের পরিমাণ কমে গেলে। (ii) ভূমির ঢাল হ্রাস পেলে (iii) শিলা খন্ডের পরিমাণ বেড়ে গেলে (iv) বহন ক্ষমতা হ্রাস পেলে নদী সঞ্চয়কাজ করে।
নদীর সঞ্চয় কাজের মাধ্যমে পলিশঙ্কু প্লাবনভূমি, স্বাভাবিক বাঁধ, নদীমঞ্চ, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, নদীচর, ব-দ্বীপ ইত্যাদি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।
• নদীর গতি (Courses of rivers)
উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদীর তিনটিগতি থাকে। যথা- (১) উচ্চগতি পার্বত্য প্রবাহ, (২) মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ এবং (৩) নিম্নগতি বা ব-দ্বীপ প্রবাহ। যে নদীর এই তিনটি গতি সুস্পষ্ট তাকে একটি আদর্শ নদী বলে। গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত গঙ্গার উচ্চগতি, হরিদ্বার থেকে রাজমহল পর্যন্ত গঙ্গার মধ্যগতি এবং রাজমহল থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত গঙ্গার নিম্নগতি। পার্বত্য গতিতে নদীর ক্ষয়কাজ, মধ্যগতিতে বহন ও সঞ্চয়কাজ এবং নিম্নগতিতে সঞ্চয়কাজ বেশি দেখা যায়।।
• নদী উপত্যকার বিকাশ (Development of river valley) উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদী যে খাতের মধ্য দিয়ে জল বয়ে নিয়ে যায়, তাকে নদী উপত্যকা বলে। বিভিন্ন গতিতে নদী উপত্যকার আকৃতি ও গঠন ভিন্ন ভিন্ন প্রকার হয়।
• (১) উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহ (Mountain course): নদী যখন পার্বত্য অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে চলে তখন তাকে নদীর উচ্চগতি বা পার্বত্যপ্রবাহ বলে। এই অংশে নদীর গতিপথের ঢাল খুব বেশি থাকে এবং নদী প্রবলবেগে নিচের দিকে ছুটে যায়। পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় অধিক হয়। পার্বত্য অংশে নদী উপত্যকা গভীর ও সংকীর্ণ হয়। নদীর এই অংশে I ও V আকৃতির উপত্যকা, গিরিখাত, ক্যানিয়ন, জলপ্রপাত, মন্থকূপ, কর্তিত শৈলশিরা ইত্যাদি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।
• Iও V আকৃতির উপত্যকা (I and V- shaped Valley): পার্বত্য প্রবাহে নদীর পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় বেশি। ফলে নদীর তলদেশ সংকীর্ণ ও গভীর হয়ে ইংরাজী I-এর মত দেখায়। পরে নদী-উপত্যকার উভয় পার্শ্বে ধ্বস ও ভূমিক্ষয়ের ফলে নদীখাত ধীরে ধীরে ক্রমশ চওড়া হয়ে V. অক্ষরের মত হয়।

• গিরিখাত ও ক্যানিয়ন (Gorge and canyon): V- আকৃতির উপত্যকা খুব গভীর হলে তাকে গিরিখাত বলে। গিরিখাত যতটা গভীর হয়, ততটা চওড়া হয় না। নেপাল হিমালয় অবস্থিত কালী গণ্ডকি নদীর গিরিখাত বা অন্ধ গলচি পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত (গভীরতা ৫৫৭১ মিটার) দক্ষিণ আমেরিকার পেরুর কল্কা নদীর গিরিখাত পৃথিবীর দ্বিতীয় গভীরতম গিরিখাত (সর্বাধিক গভীরতা ৪৩৭৫ মিঃ)। শুষ্ক বা মরুপ্রায় অঞ্চলের গিরিখাতকে ক্যানিয়ন বলে। তিব্বতের ইয়াংলু সাংপো নদীর উপর অবস্থিত সাংপো ক্যানিয়ন পৃথিবীর গভীরতম ক্যানিয়ন ((গভীরতা ৫৫০০মিটার) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কলেরাডো নদীর গ্রান্ড ক্যানিয়ন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম গিরিখাত বা ক্যানিয়ন। এর দৈঘ্য ৪৪৬ কি.মি. গভীরতা ১.৫ কিমি। এবং প্রস্থ ১২ কিমি.।
• জলপ্রপাত (Water falls): নদী তার প্রবাহপথে হঠাৎ খাড়া ঢাল বরাবর নিচে পতিত হলে তাকে জলপ্রপাত বলে। জলপ্রপাতের সৃষ্টি নানাকারণে হয়। যথা (i) চ্যুতি, (ii) লাভাপ্রবাহ, (iii) কঠিন ও কোমল শিলার পাশাপাশি অবস্থান (iv) ঝুলন্ত উপত্যকার অবস্থান (v) মালভূমির প্রান্তভাগ।

জলপ্রপাতের উদাহরণ: (ক) কারাও ক্যারোনি নদীর সাঁল্টো অ্যাঞ্জেল জলপ্রপাত দক্ষিণ আমেরিকার ভেনেজুয়েলা দেশে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত (উচ্চতা ৯৮০ মিটার)। (খ) আফ্রিকার জাইরে নদীর স্টানলি জলপ্রপাত পৃথিবীর বৃহত্তম জলপ্রপাত। কর্নাটকের সিমোগা জেলায় অবস্থিত ভারাই নদীর উপর কুঞ্চিকল ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত (উচ্চতা ৪৫৫ মি) যোগ ভারতের দ্বিতীয় উচ্চতম জলপ্রপাত। (উচ্চতা ২৭৫ মিটার)
• জলপ্রপাতের শ্রেণিবিভাগ: প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী জলপ্রপাত তিন প্রকারের হয়। যথা- (i) প্রপাতবলী (Cataract), (ii) নির্ঝর (Cascade) এবং খরস্রোত (Rapids)। প্রবল ও ভয়ঙ্করভাবে উত্তাল জলরাশি যখন নিচের দিকে পরপর কয়েকটি প্রপাত সৃষ্টি করে তখন তাকে প্রপাতবলী বলে। অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র জলপ্রপাতকে নির্ঝর এবং নদীপ্রবাহ এক লাফে না নেমে সিঁড়ির মত ধাপে ধাপে প্রবাহিত হলে তাকে খরস্রোত বলে। নীলনদের গতিপতে ৬টি ক্যাটার্যাক্ট আছে আফ্রিকার জাইরে নদী ৩২টি জলপ্রপাত সৃষ্টি করে ২৭০ মিটার নিচে নেমে এসেছে এগুলি একত্রে লিভিংস্টোন জলপ্রপাত নামে পরিচিত।
• মন্থকূপ (Potholes): জলস্রোতে পাক খাওয়া শিলাখণ্ড অবঘর্ষ ক্রিয়ার দ্বারা নদীর তলদেশে হাঁড়ির ন্যায় বিভিন্ন আকৃতির গর্তের সৃষ্টি করে। এগুলিকে মন্থকূপ বা পট হোল বলে।
• কর্তিত শৈলশিরা (Truncted spur): পার্বত্য অঞ্চলে নদীপথের ঢাল হঠাৎ বেড়ে গেলে তীব্র জলস্রোতের প্রভাবে শৈলশিরা ব্যাপকভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। একে কর্তিত শৈলশিরা বলে।
চিত্র- কর্তিত শৈলশিরা (Truncted spur):
• আবদ্ধ বা শৃঙ্খলিত শৈলশিরা (Interlocking spur): পার্বত্য অঞ্চলে নদীপথের দু-পাশে শৈলশিরাগুলি এমনভাবে অবস্থান করে থাকে যে, নদীগুলি তাদের এড়িয়ে এঁকে বেঁকে এগিয়ে যায়। এইভাবে নদীর গতিপথে একের পর এক শৈলশিরা আড়াআড়ি ভাবে থাকার ফলে নদীপ্রবাহ চোখের আড়ালে চলে যায়। দেখলে মনে হয় শৈলশিরাগুলি নদীর দু-দিক থেকে উপত্যকায় নেমে এসে পরস্পরের সঙ্গে মিশে গেছে। ফলে নদীপ্রবাহ আবদ্ধ হয়ে পড়ে। এদের আবদ্ধ বা শৃঙ্খলিত শৈলশিরা বলে।
• (২) মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ (Plain course): পার্বত্য অঞ্চল ছেড়ে নদী যখন সমভূমির উপর বয়ে চলে, তখন তাকে সমভূমি প্রবাহ বা মধ্যগতি বলে। এই অংশে নদীর ঢাল কম থাকে। ফলে নদীর গতিবেগ কমে যায় এবং নদীর ক্ষয় শক্তি খুব একটা থাকে না। প্রবাহপথে কোন বাধা পেলে নদী এঁকে বেঁকে এগিয়ে চলে। এই অংশে নদী উপত্যকা চওড়া ও অগভীর হয়। সমভূমি প্রবাহে পললশঙ্কু, নদী বাঁক, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, প্লাবনভূমি, স্বাভাবিক বাঁধ, নদীমঞ্চ ইত্যাদি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।
চিত্র- পলল শঙ্কু
• পলল শঙ্কু (Alluvial cone): পর্বতের পাদদেশে নদীবাহিত নুড়ি, বালি, পাথর, কাদা ইত্যাদি সঞ্চিত হবার ফলে ত্রিভূজাকৃতি বা পাখার ন্যায় সৃষ্ট ভূমিরূপকে পলল শঙ্কু বা পলল ব্যজনী বলে। হরিদ্বারে পলল শঙ্কু দেখা যায়।
• নদীবাঁক (Meander): সমভূমি অঞ্চলে নদীর গতিপথে কোন বাধা বা কঠিন শিলা থাকলে নদী বাধা এড়ানোর জন্য আঁকাবাঁকা পথে প্রবাহিত হয়। একে নদীবাঁক বা অসংখ্য বাঁক থাকায় পৃথিবীর সর্বত্র মিয়েন্ডার বলে। তুরস্কের মিয়েন্ড্রস নদীতে নদীবাঁক মিয়েন্ড্রস নামে পরিচিত।
চিত্র-নদীবাঁক (Meander)
• অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ (Horse shoe lake): নদী দ্বারা গঠিত দুটি বাঁকের মাঝের অংশ ক্ষয় পেলে নদী সোজাপথে এগিয়ে যায়। এর ফলে বাঁকা অংশটি নদী থেকে আলাদা হয়ে হ্রদে পরিণত হয়। এই হ্রদ দেখতে ঘোড়ার বা গরুর পায়ের ক্ষুরের মত। এদের অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বা গোক্ষুর হ্রদ বলে। মুর্শিদাবাদ জেলার গঙ্গার দুপাশে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ দেখা যায়।
চিত্র- অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ (Horse shoe lake)
• প্লাবনভূমি (Flood plain): বন্যার সময় নদীর দুই-তীরে বালি, পলি, কাদা ইত্যাদি জমে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে প্লাবনভূমি বা বন্যাগঠিত সমভূমি বলে।
• স্বাভাবিক বাঁধ বা লেভি (Natural Bar or levee): অনেক সময় নদীর দু-তীরে নুড়ি, বালি, পলি, কাদা ইত্যাদি জমে যে উঁচু বাঁধের সৃষ্টি হয়, তাকে স্বাভাবিক বাঁধ বা লেভি বলে।
• (৩) নিম্নগতি বা ব-দ্বীপ প্রবাহ (Delta course): নদী যখন মোহনার কাছাকাছি এসে পড়ে, তখন তাকে নিম্নগতি বা ব-দ্বীপ প্রবাহ বলা হয়। মোহনার দিকে নদী যতই এগোতে থাকে নদীর গতিবেগ ততই কমতে থাকে। তাই এখানে নদীর সঞ্চয়কার্যই দেখা যায়। এই অংশে নদীর গভীরতা একেবারেই কমে যায় এবং নদী উপত্যকা খুব চওড়া হয়। নদীর এই গতিতে চরা বা দ্বীপ, ব-দ্বীপ, খাঁড়ি ইত্যাদি সৃষ্টি হয়।
• চরা বা দ্বীপ (Sand bar): নদীগর্ভে নুড়ি, বালি, কাদা ইত্যাদি জমা হলে চরা বা দ্বীপের সৃষ্টি হয়। ব্রহ্মপুত্র নদের মাজুলী পৃথিবীর বৃহত্তম নদীগঠিত দ্বীপ।
চিত্র-চরা বা দ্বীপ (Sand bar)
• ব-দ্বীপ (Delta): নদী যখন সমুদ্রের কাছে এসে হাজির হয় তখন সেখানে নদীর বস্তুভার (নুড়ি, বালি, কাদা ইত্যাদি) জমা হয়ে বাংলা মাত্রাহীন ব অক্ষরের মত বা গ্রীক অক্ষর ∆ ডেল্টার মত একপ্রকার সমতল ভূমির সৃষ্টি করে। একে ব-দ্বীপ বলে। গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র নদের মিলিত ব-দ্বীপ পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম। সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সমভূমি। প্রসঙ্গত বলা যায়, কিছু কিছু নদীর ব-দ্বীপ পাখির পায়ের মত। যেমন মিসিসিপি ব-দ্বীপ।তাছাড়া সব নদীতে ব-দ্বীপ গঠিত হয় না। যেমন – ভারতের নর্মদা, তাঁপ্তি, মাহি ইত্যাদি।
চিত্র-ব-দ্বীপ (Delta)
• ব-দ্বীপ গঠনের অনুকূল পরিবেশ (suitable condition for formation of delta): (১) নদীটি বড় হতে হবে, (২) উপনদীর সংখ্যা বেশি হওয়া প্রয়োজন, (৩) ক্ষয় প্রাপ্ত পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকবে (৪) জোয়ার ভাঁটার প্রকোপ কম থাকবে (৫) সমুদ্র স্থলভাগ দ্বারা বেষ্টিত হওয়া প্রয়োজন।
• খাঁড়ি: সমুদ্রের নিকট নদীর মোহনায় জোয়ার ভাঁটার ফলে নদীতে জল ঢুকে কিছু পদার্থ সঞ্চিত হয়ে যে চওড়া উপত্যকার সৃষ্টি করে, তাকে খাঁড়ি বলে। রাশিয়ার ওব নদীর খাঁড়ি পৃথিবীর দীর্ঘতম খাঁড়ি। নদীর নিম্নগতিতেও অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, প্লাবনভূমি, স্বাভাবিক বাঁধ ইত্যাদি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।