হিমবাহের সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ/XII/3rd Semester

Depositional Land forms of glacier

হিমবাহের সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ

Depositional Land forms of glacier


হিমবাহের সঞ্চয়জাত ভূমিরূপগুলি হল :-

(I)    গ্রাবরেখা যা মোরেন (moraine)

(III)  ড্রামলিন          (Drumline)

(III)  বোল্ডার ক্লে      (Boulder clay)

(IV) এসকার           (Esker)

(V)  কেম               (kame)

(VI) আগামুখ বা ইরাটিক্স   (Erratics)

(VII) অন্যান্য :  বহিঃ বিধৌত সমভূমি। নব, কেটল, ভ্যালিট্রেন

(I) গ্রাবরেখা (moraine) :- অর্থ- Moraine বা গ্রাবরেখা একটি ফরাসি শব্দ। এর অর্থ মৃত্তিকা ও প্রস্তর দ্বারা গঠিত তীর বা উঁচু পাড় বা প্রাচীর ।

সংজ্ঞা :- উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল থেকে উপত্যকা বরাবর প্রবাহিত হিমবাহের সঙ্গে পরিবাহিত বিভিন্ন আকৃতির প্রস্তরখণ্ড, নুড়ি, বালি, কাঁকর, কাদা ইত্যাদি প্রবাহপথের বিভিন্ন অংশে সঞ্চিত হয়ে যে স্তূপাকার প্রাচীরের ন্যায় ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় তাকে গ্রাবরেখা বা মোরেন বলে।

বৈশিষ্ট্যঃ– (a) গ্রাবরেখা লম্বা আকৃতির হয়।

              (b) গ্রাবরেখায় বিভিন্ন আকৃতির শিলাখন্ড থাকতে পারে।

(c) গ্রাবরেখাগুলি প্রায় 20-40 মিটার উঁচু হয় ।

(d) গ্রাবরেখাগুলি হিমবাহের বিভিন্ন দিকে গঠিত হয়।

নামকরণ :- 1841 সালে জে.ভি কার্পেন্টিয়ার (J.V carpentier) সবপ্রথম moraine শব্দটি ব্যবহার করেন।

উদাহরণ :- তিস্তা নদী উচ্চ তাববাহিকার লাচেন অঞ্চলে গ্রাবরেখা দেখা যায়।

শ্রেণিবিভাগ :- গ্রাবরেখা নানা ধরনের হয়। যথা

(I) পার্শ্ব গ্রাবরেখা (Lateral Moraine)

(II) প্রান্ত বা সম্মুখ গ্রাবরেখা (Terminal Moraine)

(III)ভূমি গ্রাবরেখা (Ground Moraine)

(IV) মধ্য গ্ৰাবরেখা (Medial Moraine)

(V) রোজেন গ্রাবরেখা (Rozen Moraine)

(VI) হিমাবদ্ধ গ্রাবরেখা (Englacial Moraine)

(VII)বলয়ধর্মী গ্রাবরেখা (Lobate Moraine)

(VIII)অবিন্যস্ত গ্রাবরেখা (Push-pull Moraine)

পার্শ্বগ্রাবরেখা :-  উপত্যকার উভয় পার্শ্বে হিমবাহের সমান্তরালে যে গ্রাবরেখা সৃষ্টি হয় তাকে পার্শ্ব গ্রাবরেখা বলে।

প্রান্ত গ্রাবরেখা :- হিমবাহের প্রান্তভাগে বা শেষপ্রান্তে যে গ্রাবরেখা দেখা যায় তাকে প্রান্ত গ্রাবরেখা বলে।

মধ্য গ্রাবরেখা :- পাশাপাশি দুটি হিমবাহের মধ্যবর্তী স্থানে যে গ্রাবরেখা সৃষ্টি হয় তাকে মধ্য গ্রাবরেখা বলে।

ভূমি গ্রাবরেখা :- হিমবাহের তলদেশে সৃষ্ট গ্রাবরেখাকে ভূমি গ্রাবরেখা বলে।

হিমাবদ্ধ গ্রাবরেখা :- ক্রেভাসে সঞ্চিত হয়।

হিমতল গ্রাবরেখা :-  বার্গস্রুন্ড অথবা ক্রেভাসেরমধ্য দিয়ে ক্ষয়জাত পদার্থ প্রবেশ করে যে গ্রাবরেখা গঠিত হয়। তাকে হিমতল গ্রাবরেখা বাল।

রোজেন গ্রাবরেখা :- গ্রাবরেখাগুলি একে অপরের উপর সঞ্চিত হলে তাকে রোজেন গ্রাবরেখা বলে। সুইডেনের রোজেন হ্রদে এরকম দেখা যায়।

অবিন্যস্ত গ্রাবরেখা :- হিমবাহের প্রাস্তভাগে বিক্ষিপ্তভাবে সঞ্চিত গ্ৰাবরেখাকে অবিন্যস্ত গ্ৰাবরেখা বলে।

ড্রামলিন(Drumlin) :- আইরিশ শব্দ, Droimnin (ড্রোইমনিন) থেকে Drumlin শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। এর অর্থ mound (মাউন্ড) বা ঢিবি।হিমবাহ দ্বারা পরিবাহিত বিভিন্ন আকৃতির প্রস্তরখণ্ড নুড়ি, বালি, কাদা ইত্যাদি প্রবাহপথে সাঞ্চিত হয়ে উল্টানো নৌকা বা চামচের মতো ভূমিরূপ সৃষ্টি হলে তাকে ড্রামলিন বলে।

বৈশিষ্ট্য :-

(I) ড্রামলিন হিমবাহের সমান্তরালে গঠিত হয়।

(II) ড্রামলিনের উচ্চতা 6-50 মিটার, দৈর্ঘ্য

2-3 কিমি হতে পারে।

(III)এর হিমবাহের প্রকহের দিক অমসৃণ ও বিপরীত দিক মসৃন হয।

উদাহরণ :- স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডে এবং ভারতের কুমায়ুন হিমালায়ের পিন্ডারি হিমবাহে ড্রামলিন দেখা যায়।

ডিমের ঝুড়ি (Basket of eggs) :- অনেকগুলিড্রামলিন একসঙ্গে অবস্থান করে থাকলে দূর থেকে ডিমভর্তি ঝুড়ি মনে হয়। একে Basket of eggs rellef বা Topography বলে।

বোল্ডার ক্লে ও ঢিল (Boulder clay and Till)

:- হিমবাহে গলে গেলে পর্বতের পাদদেশে ইতস্ততভাবে যে কর্দমময় বোল্ডার সহ অবক্ষেপ ঘটে তাকে বোল্ডার ক্লে বা হিমকর্দ বলে। হিমবাহ গলে গেলে সঞ্চিত অবক্ষেপ যদি কর্দম কণার প্রাধান্য থাকে তবে তাকে টিল বলে।

উদাহরণ :- আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ও পশ্চিম ভাগে 2.5 হাজার বর্গ কিমি স্থান জুড়ে বিশাল চাদরের মত হিম করতো সঞ্চয় দেখা যায়। 

আগামুখ বা ইরাটিক্স(Erraties) :- হিমবাহ দ্বারা প্রবাহিত বড়ো বড়ো প্রস্তরখণ্ডগুলি সঞ্জিত হয়ে যে ভূমিরূপ গঠন করে তাকে আগামুখ যা ইরাটিক্স বলে। অর্থাৎ হিমবাহ দ্বারা সঞ্চিত বিশাল আকৃতির প্রস্তরখণ্ডই হল আগামুখ। 

উদাহারণ-কাশ্মীরের পহেলগাম অঞ্চলে আগামুখ দৃষ্টিতে দৃষ্টিগোচর হয়। 

বৈশিষ্ট্য :- (I)আগামুখ সাধারণত কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত।

(II) আগামুখের সাহায্যে হিমবাহের উৎস প্রবাহপথ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়।

কেম(kame)  :- হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত ত্রিভূজাকৃতি ভূমিরূপকে কেম বলে। কেম যখন ধাপেধাপে সৃষ্টি হয় তখন তাকে কেম সোপান বলা হয়।হিমবাহের শেষ প্রান্তে যদি কোনো বড় জলাভূমি বা হ্রদ থাকে তার তার মধ্যে হিমবাহ বাহিত বিভিন্ন শিলাখন্ড, নুড়ি, কাঁকর, কাদা প্রভৃতি স্তূপাকারে সঞ্চিত হয়ে ত্রিকোণাকার ব-দ্বীপের মতো ভূমিরূণ গঠিত হয় যা কেম নামে পরিচিত।

উদাহরণ :- ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের গ্লাভেন উপত্যকায় কেম দেখা যায়।

এসকার (Eskar) :- হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলির মধ্যে যেগুলি দেখতে আকাবাঁকা শৈলশিরা বা সাপের মতো তাদের এসকার বলে। পর্বতের পাদদেশে এসকার গঠিত হয়।

বৈশিষ্ট্য :- (I) এসকারের উচ্চতা ৩-৫ মিটার হয়।

               (II) এগুলি কয়েক কি.মি. দীর্ঘ হয়।

উদাহরণ :- ইউরোপের ফিনল্যান্ডের পুনকাহারয়ু।


: প্রশ্নাবলী: হিমবাহের কার্য

(A) সঠিক উওরটি নিবার্চন কর:

(১) হিমবাহের  কার্য একটি-

(a) অন্তর্জাত প্রক্রিয়া       (b) বহির্জতি প্রক্রিয়া

(c) পুঞ্জক্ষয়                   (d) নগ্নীভবন

Ans- b

(২) হিমবাহের কার্য বেশি দেখা যায়!-

(a) মরু অঞ্চলে             (b) আর্দ্র অঞ্চলে

(c) পার্বত্য অঞ্চলে         (d) শুষ্ক অঞ্চলে।

Ans- c

(৩) পৃথিবীর দ্রুততমষ হিমবাহের নাম:-

(a) জোকাভ সান          (b) ল্যাম্বার্ট

(c) মালাসপিনা            (d) কোনোটাই নয়

Ans- a

(8) ভারতের বৃহত্তম হিমবাহের নাম

(a) সিয়াচেন               (b) গঙ্গোত্রী

(c) যমুনোত্রী               (d) কোনোটাই নয়

Ans- a

৫ ) বৃহত্তম পাদদেশীয় হিমবাহের নাম

(a) হুবার্ড                  (b) সিয়াচেন

(c) ল্যাম্বার্ট                (d) মালাসপিনা

(৬) বৃহত্তম পার্বত্য হিমবাহের ম-

(a) মালাসপিনা         (b) হুবার্ড

(c) সিয়াচেন             (d) কোনোটাই নয়


(B) শূন্যস্থান পূরণ কর!

(১) নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন বহিঃবিধৌত সমভূমিকে ___ বলে।

(a) বার্গস্রুন্ড                     (b) ক্রেভাস

(c) ভ্যালিট্রেন                   (d) আইসল্যান্ড

(২) অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রাকার মহাদেশীয় হিমবাহাক ____ বলে।

(a) ফিয়োর্ড                      (b) আইসক্যাপ

(c) নুনাটকস                    (d) কোনোটাই নয়

(৩) বরফমুক্ত পর্বতশৃঙ্গ _____ নামে পরিচিত

(a) হিমারেখা                   (b) আইসক্যাপ

(c) নেভে                         (d) নুনাটকস

(৪) করির পেছনের মস্তক দেওয়াল ও হিমবাহের মধ্যে যে ফাঁক দেখা যায় তাকে  ______ বলে।

(a) বার্গস্রুন্ড                     (b) র‍্যান্ড ক্লাফট

(c) ক্রেভাস                      (d) ফিয়োর্ড

(৫) দুটি করির মধ্যবর্তী উঁচু অংশকে _______ বলে।

(a) পিরামিড চূড়া             (b) এরিটি /অ্যারেৎ

(c) গ্রাবরেখা                   (d) ড্রামলিন

(৬) হিমবাহের তলদেশে সঞ্চিত গ্রাবরেখা _______ নামে খ্যাত

(a) প্রান্ত গ্রাবরেখা           (b) পার্শ্ব গ্রাবরেখা

(c) রোজেন গ্রাবরেখা      (d) ভূমিগ্রাবরেখা


(C)  সঠিক স্তম্ভ মেলাও

ক-স্তম্ভখ-স্তম্ভ
(a) সংকীর্ণ আঁকাবাঁকা শৈলশিরা(I) উল্টানো নৌকা
(b) আগামুখ(II) ত্রিভূজাকৃতি ভূমি
(c) ড্রামলিন(III) এসকার
(d) কেম(IV) বৃহৎ শিলাখণ্ডের অবক্ষেপ

বিকল্প সমূহ:-          a            b               c              d

  1.                 (I)          (III)            (III)         (IV)
  1.                (II)           (I)             (IV)         (III)
  2.                (III)          (I)             (II)         (IV)
  3. ✓             (III)          (IV)            (I)         (II)
ক-স্তম্ভখ-স্তম্ভ
(a) ফিয়োর্ডের দেশ(I) ড্রামলিন
(b) প্যাটারনস্টার হ্রদ(III) ইয়্যোসামাইট
(c) Basket of-eggs Topography(III) নরওয়ে
(d) U- আকৃতির উপত্যকা(IV) হিমসিঁড়ি

বিকল্প সমূহ:-          a            b               c              d

  1.                 (I)           (II)            (III)         (IV)
  1.                (II)           (IV)            (I)         (III)
  2.                (IV)          (II)             (III)         (I)
  3. ✓             (III)          (IV)           (I)         (II)

          ক-স্তম্ভ          ‌‌                              খ-স্তম্ভ

(a) এশিয়ার বৃহত্তম হিমবাহ                    (I) প্যাস্টারাজ

(b) ইউরোপের বৃহত্তম হিমবাহ                (II) সিয়াচেন

(c) অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম হিমবাহ              (III) উপসালা

(d) দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম হিমবাহ    (IV) ভাতনা জোকুল

বিকল্প সমূহ:-

          a           b              c               d

(A)    (I)          (II)            (III)          (IV)

(B)✓   (II)          (IV)          (I)         (III)

(C)    (III)          (I)            (II)         (IV)

(D)    (IV)          (II)            (I)         (III)

(D) সাজিয়ে লিখ (Re-arrangement)

(I) নেভে      (II) ফার্ণ      (III) বরফ     (IV) হিমবাহ

(I) বরফ      (II) নেভে      (III) ফার্ণ     (IV) হিমবাহ

(I) ফার্ণ      (II) বরফ      (III) নেভে     (IV) হিমবাহ

(I) বরফ      (II) ফার্ণ      (III) নেভে     (IV) হিমবাহ

বিকল্প সমূহ:-

   (A) – II, I, III, IV

   (B) – III, II, I, IV

   (C) – II, III, I, IV

✓(D) – I, II, III, IV

E) বিবৃতি ও কারণের সম্পর্ক

বিবৃতি (Assertion) – নিরক্ষীয় অঞ্চলে হিমরেখা সমুদ্রপৃষ্ঠে অবস্থান করে।

কারণ (Reason) – নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয়।

বিকল্পসমূহ :-

✓(A) বিবৃতি ও কারণ দুটোই সঠিক

  (B) বিবৃতি সঠিক কিন্তু কারণ সঠিক নয়।

  (C) বিবৃতি ও কারণ দুটোই সঠিক নয়।

  (D) বিবৃতি সঠিক নয় কিন্তু কারণ সঠিক।

(F) মত/মিথ্যা নিবার্চন করঃ

(I) ক্র্যাগ কঠিন শিলা দ্বারা এবং টেল কোমল শিলা দ্বারা গঠিত।

(II) উচ্চ অক্ষাংশে হিমরেখার উচ্চতা কম।

(III) সার্ক হল হিমবাহের সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ।

(IV) গঙ্গোত্রী হিমালয়ের বৃহত্তম হিমবাহ।

বিকল্প সমূহ:-

              (I)     (II)         (III)        (IV)

   (A) – সত্য     সত্য        সত্য       সত্য

   (B) – মিথ্যা   মিথ্যা      মিথ্যা      মিথ্যা

 ✓(C) – সত্য     সত্য      মিথ্যা      সত্য

   (D) – মিথ্যা    সত্য        মিথ্যা     সত্য

(G) বিষয় ভিত্তিক প্রশ্নঃ (তথ্যটি পড়ে সঠিক উত্তরটি লেখো) 

পর্বতের পাদদেশে হিমবাহ গলিত জল নানা আকৃতির শিলাখন্ড, কাঁকর, কাদা বয়ে এনে জমা করে এবং ত্রিভূজাকৃতি একটি ভূমিরূণ গঠন করে। এই ভূমিরূপটিকে কি বলা হয়?

(a) রসে মতানে       ✓(b) কেম

(c) এসকার             (d) নব ও কেটল

(H) ডায়াগ্রাম ভিত্তিক (ডায়াগ্রাম দেখে সঠিক উত্তরটি লিখ)

বিকল্পসমূহ :-

            (I)         (II)           (III)          (IV)

  (A) হিমশৈল   ক্রেভাস   রসেমতানে   হিমদ্রোনী

  (B) হিমাদ্রাণী   রসেমতানে   ক্রেভাস  হিমশৈল

✓(C) রসেমতানে    ক্রেভাস    হিমদ্রোনী   হিমশৈল

  (D) ক্রেভাস     হিমাদ্রোনী   রসেমতানে   হিমশৈল

Leave a Comment