চ্যুতি Fault /class-XI/ semester-2
সিলেবাস -চ্যুতি সংজ্ঞা ( Definition of fault))
(১)চ্যুতি কাকে বলে?
উত্তর →ভূ-আন্দোলনের ফলে শিলা স্তরে ফাটলে ও দারণের সৃষ্টি হয়। ফাটল বরাবর শিলাস্তরের এক অংশ অপর অংশ থেকে বিচ্যুত হলে তাকে চ্যুতি বা স্রংস বলে,যে অনুভূমিক রেখা বরাবর এই চ্যুতি ঘটে তাকে চ্যুতিরেখা বা স্রংসরেখা বলে যে তল বরাবর শিলারর এক অংশ অন্য অংশ থেকে বিচ্যূত বা স্থানচ্যূত হয় তাকে চ্যুতিতল বা স্রংসতল বলে ।
উত্তর- চ্যুতির বৈশিষ্ট্য [i] চ্যুতি অনুভূমিক বা তির্যক উল্লম্ব তল বরাবর ঘটতে পারে।
[ii] চ্যুতির ফলে শিলাস্তর উপরে উঠে যায় বা নিম্নে বসে যায় বা কখনও পাশে সরে যায়।
[iii] চ্যুতির দুটি পার্থ থাকে, যার একটি উর্ধ্বক্ষেপ পার্শ্ব এবং অপরটি অধঃক্ষেপ পার্শ্ব।
[iv] চ্যুতির ফলে ভূমিভাগ প্রায় খাড়াভাবে বসে যায় বা উত্থিত হয়।
[v] চ্যুতির আয়াম সর্বদা নীতির সঙ্গে সমকোণে থাকে।
[vi] মহিভাবক ও গিরিজনি উভয় আলোড়নের ফলে চ্যুতির সৃষ্টি হতে পারে।
সিলেবাস- চ্যুতি গঠনের পদ্ধতি,(mechanism of faulting).
৪)চ্যুতি সৃষ্টির প্রক্রিয়া লিখ ।
উত্তর-(i) প্রসারণ বলের প্রভাব-শিলাস্তরের প্রসারণ বলের প্রভাবে ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় ওই ফাটল বরাবর যে তল সৃষ্টি হয় সেই তলের একদিকের একটি খন্ড উঠে গেলে এবং অপরদিকে একটি খন্ড বসে গেলে চ্যুতির সৃষ্টি হয়।
(ii)সংনমন বলের প্রভাব-সংকোচন বা সংনমন বলের প্রভাবে শিলা স্তরে যে ফাটল সৃষ্টি হয় সেই ফাটল বরাবর দুই পাশের শিলাস্তর স্থানচ্যুতি হলে চ্যুতির সৃষ্টি হয়।
(iii)সমস্থিতিক ভারসাম্য-বন্ধুর ভূপ্রকৃতি সম্পন্ন অঞ্চলে ক্ষয় বহন সঞ্চয় ক্রিয়ার ফলে উচ্চতা তারতম্য ঘটলে যখন সমস্থিতিক ভারসাম্য প্রকট হয় তখন শিলাস্তরে তীব্র পিড়নে চ্যুতির সৃষ্টি হয়।
(iv)পাত সঞ্চালন-দুটি বিপরীত পাতের সঞ্চালনে শিলাস্তরে যে ট্টটান সৃষ্টি হয় তারফলে পাত সীমানায় চ্যুতির সৃষ্টি হয়।
(৫)চ্যুতির গাঠনিক উপাদানসমূহ (Structural Elements of Fault)লিখ ।
প্রশ্ন- সিলেবাস-চ্যুতির গাঠনিক উপাদানসমূহ (Structural Elements of Fault)
উত্তর(i) চ্যূতিরেখাও চ্যুতিতল ও ( Fault Line and Fault Plane):যে অনুভূমিক রেখা বরাবর চ্যুতিতল এবং ভূ-পৃষ্ঠ পরস্পরকে ছেদ করে বা মিলিত হয়, তাকে চ্যুতিরেখা বলে। DC হল চ্যুতিরেখা যে তল বরাবর ভূ-পৃষ্ঠস্থ শিলার খন্ডিত অংশের স্খলন ঘটে,তাকে চ্যুতিতল বা স্রংস তল বলে। চ্যুতিতলের নতি মোটামুটি সমতল ও মসৃণ হয়।
(ii)চ্যুতিকোণ বা হেড (Head): উল্লম্ব তলের সঙ্গে চ্যুতি তল যে কোন হেলে থাকে তাকে চ্যুতি কোণ বা হেড বলে । BAC হল চ্যুতি কোণ ।
(iii) চ্যুতি নতি (Fault dip)-অনুভূমির তলের সাপেক্ষে চ্যুতি তল যে কোণে হেলে বা নত হয়ে থাকে তাকে চ্যুতি নতি বলে । অর্থাৎ চ্যুতি তল এবং অনুভূমির তলের মাঝখানে উৎপন্ন কোণ হলো চ্যুতিনতি । চ্যুতি কোণ এবং চ্যুতি-নতি পরস্পর পূরক কোণ । চ্যুতি কোণ এবং চ্যুতি নতি যোগ করলে ১ সমকোণ বা ৯০ ডিগ্রি হয় । PCO হল চ্যুতি নতি ।
(iv)ক্ষেপ (Throw): প্রত্যেক চ্যুতি বা স্রংসের স্থানচ্যুত অংশের উলম্ব ব্যবধানকে ক্ষেপ বলে। এটি কয়েক সেন্টিমিটার থেকে বেশ কয়েক মিটার পর্যন্ত হতে পারে।AB হল ক্ষেপ বা থ্রো । ।
(v) ব্যবধি (Heave): অনেক সময় চ্যুতি খাড়াভাবে বা উল্লম্বভাবে (Vertical Fault না থেকে হেলে (laclined) অবস্থান করে। তখন তার একটি পার্শ্বীয় ব্যবধান (Lateral Displacement) ঘটে। এই পার্শ্বীয় ব্যবধানকে ব্যবধি বলে। AT হল হিভ।

(vi)আয়াম বা স্ট্রাইক (strike)-চুতি তল ও অনুভূমিক তলের ছেদ রেখাকে আয়াম বলে CD হল আয়াম ।
(v)ঝুলন্ত প্রাচীর ও পাদমূল প্রাচীর (Hanging Wall বা Upthrow Side) এবং (Foot Wall বা Down throw Side):
চ্যুতির ফলে শিলাসমূহের যে অংশ উপরে অবস্থান করে ঝুলতে থাকে, তাকে ঝুলন্ত প্রাচীর বা ঊর্ধ্বক্ষেপ পার্শ্ব এবং অন্য অংশকে পাদমূল প্রাচীর বা অধঃক্ষেপ পার্শ্ব (Down throw side) বলা হয়। সংকোচনের ফলে চ্যুতি ঘটলে চ্যুতিতল বরাবর শিলাখন্ড উপরে উঠে গিয়ে ঝুলতে থাকলে তাকে ঝুলন্ত প্রাচীর এবং যে অংশটি ভূমিদেশে নেমে অবস্থান করে তাকে পাদমূল প্রাচীর বলে। আবার, টানের ফলে চ্যুতি ঘটলে চ্যুতিতল বরাবর শিলাখন্ড নীচে নেমে গিয়ে ঝুলতে থাকলে তাকেও ঝুলন্ত প্রাচীর বলে। এক্ষেত্রে নীচের অংশটি ঝুলন্ত প্রাচীর এবং উর্ধ্বে স্বস্থানে অবস্থানকারী শিলাখন্ডটিকে পাদমূল প্রাচীর বলা হয়।
(৩)আয়াম বা স্ট্রাইক (strike) কাকে বলে ?
কোনো স্থানে চ্যুতি গঠিত হলে অনুভূমিক তলের সাপে্কষযে কোন উৎপন্ন হয় তাকে নতি (Dip) বসে। নতির দিকে ৯০° কোণ করে যে কাল্পনিক রেখা টানা হয় আয়াম বা স্ট্রাইক বলে।
সিলেবাস- চ্যুতির প্রকারভেদ(Types of fault)
(৪)বিভিন্ন প্রকার চ্যুতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও
উৎক্ষেপের প্রকৃতি ,চ্যুতি ও শিলাস্তরের অবস্থান, স্খলন ও ঘনসংবদ্ধতার ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ অনুসারে চ্যুতিকে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা যায় । যথাঃ
(১) অনুলোম বা স্বাভাবিক চ্যুতি (Normal Fault): শিলাস্তরের পীড়ন ও বিভঙ্গেরfracture) ফলে যে চ্যুতিতে চ্যুতিতল বরাবর ঊর্ধ্বস্তূপ নিচের দিকে বসে যায় তাকে অনুলোমযুক্তি বলে। সাধারণত অনুভূমিক ও অভিকর্ষজ টানের ফলে এই চ্যুতির সৃষ্টি হয়। অভিকর্ষজ টানের ফলে ঝুলন্ত প্রাচীর নিচে বসে যায়। তাই একে অভিকর্ষজ চ্যুতি বলে ।
বৈশিষ্ট্য -(i) চ্যুতিতল হেলানো বা উল্লম্ব হতে পারে ।
(ii)চ্যুতিতল নতির পরিমাণ ৪৫° থেকে ৯০° হয় ।
(iii)উর্ধ্বস্তূপ চ্যুতিতল থেকে নিচে অবস্থান করে ।
উদাহরণ- ফ্রান্সের ভোজ ও জার্মানির ব্লাক ফরেস্ট স্তুপ পর্বতে অনুলোম বা স্বাভাবিক চ্যুতি দেখা যায়।
(২) বিলোম চ্যুতি বা বিপরা চ্যুতি বা বিপরীত চ্যুতি (Reverse Fault): সংনমন শক্তির ফলে বিভঙ্গিত(fracture)শিলাখন্ড পরস্পরের দিকে সরণের ফলে চ্যুতিতল বরাবর অধোস্তুপ নিচে বসে গেলে এবং ঊর্ধ্বস্তুপ অর্থাৎ ঝুলন্ত প্রাচীর উপরে অবস্থান করলে তাকে বিলোম চ্যুতি বা বিপরা চ্যুতি (Reverse Fault)বলে।বৈশিষ্ট্য(i)-ঝুলন্ত প্রাচীর স্থির থাকে পাদমূল প্রাচীর বসে যায় ।(ii)বিলোম চ্যুতি সংনমন শক্তির(Compression Force) ফলে গঠিত হয়। iii)চ্যুতি তলের নতি 45° বা তার কম হয়।উদাহরণ- পশ্চিম হিমালয়ে দেখা যায় ।
(৩) আয়াম-বরাবর স্খলিত চ্যুতি অথবা ছিন্নচ্যুতি (Strike slip Fault or Tear Fault):যে চ্যুতিতে একদিকের শিলাসমূহ প্রায় উল্লম্ব চ্যুতিতল বরাবর অন্যদিকের শিলাসমূহ থেকে দূরে একই তলে অবস্থান করে তাকে ।ছিন্নচ্যুতি বলে । দেখে মনে হয়, যেন একদিকের শিলাসমূহ অন্যদিকের শিলাসমূহের গা ঘেঁষে দূরে একই তলে সরে গেছে। এই চ্যুতিতে কোনো উল্লম্ব ব্যবধান থাকে না।
(৫)পরিখা চ্যুতি (Trough or Trench Fault): সোপান চ্যুতি শ্রেণিবদ্ধভাবে দুদিক থেকে এসে মিলিত হয়ে সরু পরিখারমতো সৃষ্টি করলে, তাকে পরিখা চ্যুতি বলে। জার্মান ভাষায় একে গ্রাবেন (Graben) বলা হয়। পরিখা চ্যুতিটি যদি আয়তনেবৃহৎ এবং সুদূরপ্রসারী হয়, তা হলে তাকে গ্রস্ত উপত্যকা (Rift Valley) বলে। সাধারণত দুটি সমাস্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশনীচে বসে গিয়ে প্রস্ত উপত্যকার সৃষ্টি হয়।
(৪)সোপান চ্যুতি (Step Fault): অনেকগুলি অনুলোম চ্যুতি একত্রে অবস্থান করলে চ্যুতিতল সিঁড়ির ন্যায় ধাপে ধাপে ক্রমশ নেমে গেছে মনে হয়। এরূপ চ্যুতিকে সোপান চ্যুতিবলে। ইউরোপে রাইন নদীর গ্রন্ত উপত্যকা সোপান চ্যুতির একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। পশ্চিম ফ্রান্সের দিকে ভোজ পর্বত এবংজার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট পর্বত ক্রমশ ধাপে ধাপে নেমে গেছে।
(৬)রিজ চ্যুতি (Ridge Fault): কখনো কখনো ভূত্বকে দুটি সমান্তরাল চ্যুতির ফলে মধ্যবর্তী অংশ পার্শ্ববর্তী অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে চাপের ফলে নীচে না বসে উপরে উঠে পড়ে (Upthrust)। এই উত্থিত অংশকে জার্মান ভাষায় হোস্ট বা স্তূপ পর্বত বলে। এই ধরনের চ্যুতিকে রিজ চ্যুতি বলা হয়।
(৭)তির্যক চ্যুতি (Tilted Fault): চ্যুতির ফলে শিলান্তর চ্যুতির একদিকে বা উভয়দিকে হেলে অবস্থান করলে তাকে তির্যক চ্যুতি বলে। এক্ষেত্রে, শিলাস্তর উল্লম্ব ও অনুভূমিকভাবে উভয় দিকেই সরে যায়।
…
(৮) এঁশেলো চ্যুতি (Encholon Fault): চ্যুতিতল তীক্ষ্ণ কোণে পরস্পর অবস্থানে সিঁড়ির ধাপের ন্যায় হেলে অথচ বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করলে তাকে এঁশেলো চ্যুতি বলে।
(৯) সমান্তরাল চ্যূতি (Parallel Fault): একাধিক চ্যুতি সমান নতি ও আয়ামবিশিষ্ট এবং পরস্পরের সমান্তরাল হলে তাকে সমান্তরাল চ্যুতি বলে।
।(১০) অরীয় চ্যুতি (Radial Fault ): চুত্যিরেখাগুলি কেন্দ্র বিন্দু থেকে বাইরের দিকে প্রসারিত হলে তাকে অরীয় চ্যুতি বলে।
(১১)উদ্ঘট্ট চুত্যি -(Over thrust fault)-সংনমনের ফলে এই চ্যুতি গঠিত হয় । চুতি তলের এক দিকের শিলাস্তর অন্যদিকের শিলাস্তরের উপর সর হয়ে পাতের ন্যায় অতি ক্ষুদ্র কোণেঅ বস্থান করলে তাকে উদ্ঘট্ট চুত্যি বলে।
(১২)বৃত্তাকার চ্যুতি বা পরিধি চ্যুতি ( Arcuate Fault ): কোনো বৃত্তের কেন্দ্রের চারদিকে চ্যুতিগুলি বৃত্তচাপের আকারে অবস্থান করলে তাকে বৃত্তাকার চ্যুতি বলে। বৃত্তের পরিধিতে অবস্থান করলে এদের পরিধি চ্যুতি -ও বলে। যে তল বরাবর এইচ্যুতি ঘটে তাকে সংঘট তল বলে।
(৫) চ্যুতির ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও ।
উত্তর- শিলাস্তরে চ্যুতির ফলে সৃষ্ট ভূমি্রূপগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখজোগ্য হল-
(১) চ্যুতি ভৃগুতট চ্যুতির ফলে শিলাস্তরের ঊর্ধ্বস্তূপ ও অধোস্তূপের মধ্যে সৃষ্ট খাড়াই ঢালকে চ্যুতি ভৃগুতট বলে। যেমন-গণ্ডোয়ানা যুগে সৃষ্ট দামোদর নদ বরাবর গ্রস্ত উপত্যকা।
(২)স্তূপ পর্বত -ভূ-আলোড়নের দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ পার্শ্ববর্তী অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ওপরে উঠে গিয়ে যে উঁচু ভূমিরূপ বা পর্বত গঠন করে, সেই ভূমিরূপ বা পর্বতকে স্তুপ পর্বত বলে।
উদাহরণ-ভারতের নর্মদা ও তাপ্তি নদীর মাঝে সাতপুরা পর্বত ও জার্মানির রাইন ও ফ্রান্সের রোন নদীর মাঝে ভোজ পর্বত হল স্তূপ পর্বত ।
(৩)গ্রস্ত উপত্যকা – ভূ-আলোড়নের ফলে দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ পার্শ্ববর্তী অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নীচের দিকেবসে গিয়ে যে অবনমিত ভূভাগের সৃষ্টি করে, সেই ভূভাগকে গ্রস্ত উপত্যকা বলে।গ্রস্ত উপত্যকার উভয় পাশে স্তুপ পর্বত বিরাজ করে ।
উদাহরণ-— সাতপুরা ও বিন্ধ্য পর্বতের মাঝে নর্মদা নদীর উপত্যকা ।
(৪) র্যাম্প উপত্যকা – দুটি স্বাভাবিক চ্যুতির মধ্যবর্তী অবনমিত ভূভাগকে গ্রস্ত উপত্যকা বলে। কিন্তু র্যাম্প উপত্যকা বলতে দুটি বিপরীত চ্যুতির মধ্যবর্তী অবনত ভূভাগকে বোঝায়। গ্রস্ত উপত্যকার ক্ষেত্রে প্রসারিত ভূমিভাগের সৃষ্টি হয় ও র্যাম্প উপত্যকার ক্ষেত্রে ভূপৃষ্ঠ সংকুচিত হয়।
……………………………………………………………………………………………………………