নদীর কার্য (Works of rivers)

নদীর কার্য (Works of rivers) প্রশ্ন ও উত্তর

১)নদী কাকে বলে?

• নদীর সংজ্ঞা (Definition of rivers): উচ্চ মালভূমি বা পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন প্রাকৃতিক জলধারা ভূমির ঢাল বরাবর প্রবাহিত হয়ে কোন সমুদ্র বা হ্রদে পতিত হলে তাকে নদী বলে। নদীর সৃষ্টি প্রধানত তিনভাবে হতে পারে – (১) বরফগলা জল থেকে (২) বৃষ্টির জল থেকে (৩) হ্রদ কিংবা ঝর্ণার জল থেকে।

চিত্র -,নদী, উপনদী, প্র-উপনদী, শাখা নদী, প্র-শাখা নদী,  নদীর, উৎস ও মোহনা 

২)নদী উৎস ও মোহনা বলতে কি বুঝো 

উত্তর  -নদীর উৎস ও মোহনা (Source and mouth) : যেখান থেকে নদীর সৃষ্টি হয়, তাকে নদীর উৎস বলে। যেখানে নদী সাগরে বা হ্রদে পতিত হয় তাকে নদীর মোহনা বলে। যেমন – গঙ্গা নদীর উৎস গঙ্গোত্রী হিমবাহ এবং মোহনা বঙ্গোপসাগরের সাগরদ্বীপের নিকটবর্তী অঞ্চল।

)উপনদী প্র- উপনদী কাকে বলে? 

উত্তর • উপনদী ও প্র-উপনদী : স্বতন্ত্রভাবে উৎপন্ন কোনো নদী অন্য নদীতে মিশলে তাকে উপনদী এবং উপনদীর সঙ্গে মিলিত নদীকে প্র-উপনদী বলে। যেমন – গঙ্গার উপনদী যমুনা এবং প্র-উপনদী চম্বল ।

)শাখা নদী প্র-শাখা নদী কাকে বলে? 

উত্তর ● শাখানদী ও প্রশাখানদী : যে নদী কোনো নদী থেকে আলাদা হয়ে যায়,তাকে শাখানদী এবং শাখানদী থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া নদীকে প্র-শাখা নদী বলে। যেমন— ভাগীরথী ও

হুগলী নদী হল গঙ্গার শাখানদী এবং মাতলা, গোসাবা ইত্যাদি গঙ্গার প্রশাখা নদী।

)নদী অববাহিকা কাকে বলে? 

চিত্র -,নদী অববাহিকা

উত্তর- নদী অববাহিকা (RiverBasin) : প্রধান নদী, উপনদী, প্র-উপনদী, শাখা ও প্রশাখা নদী দ্বারা সৃষ্ট বিস্তৃত অঞ্চলকে নদী অববাহিকা বলে। যেমন— গঙ্গা নদীর অববাহিকা।

)নদী উপত্যকা কাকে বলে? 

উত্তর  -নদী উপত্যকা (River Valley) : উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদী যে অঞ্চলেরমধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাকে নদী উপত্যকা বলে।

৭)নদী দোয়াব কাকে বলে? 

উত্তর -দোয়াব অঞ্চল : দুটি নদীর মধ্যবর্তী স্থানকে দোয়াব অঞ্চল বলে। যেমন -গঙ্গা ও যমুনা নদীর মধ্যবর্তী স্থানকে গঙ্গা-যমুনা দোয়াব অঞ্চল বলে।

৮)জলবিভাজিকা কাকে বলে?

চিত্রজলবিভাজিকা (Water shed) :

উত্তর • -জলবিভাজিকা (Water shed) : যে উচ্চভূমি দ্বারা দুটি নদী অববাহিকা বিভক্ত, তাকে জল বিভাজিকা বলে। যেমন – মধ্য ভারতের মালভূমি দাক্ষিণাত্য ও উত্তর ভারতের নদীগুলির জল-বিভাজিকা হিসেবে অবস্থিত

৯)নদী,কয় প্রকার কাজ করে কি কি? 

•উত্তর – নদীর কাজ (Works of rivers) •

নদী তার গতিপথে ক্ষয়, বহন ও অবক্ষেপণ এই তিন প্রকার কাজ করে। এই কাজগুলি নির্ভর করে নদীর ক্ষমতা বা শক্তির উপর। আবার নদীর শক্তি নির্ভর করে নদীর জলের পরিমাণ ও নদীর জলের গতিবেগের উপর। জলের পরিমাণ এবং গতিবেগকে একত্রে নদী প্রবাহ বলে। নদী প্রবাহ মূলতঃ ভূমির ঢাল ও জল সরবরাহের উপর নির্ভরশীল। ভূমির ঢাল কিংবা জল সরবরাহের পরিমাণ বেড়ে গেলে নদীর শক্তিও বেড়ে যায়। 

১০)ষষ্ঠ ঘাতের সূত্র কি? 

উত্তর -পরীক্ষার সাহায্যে দেখা গেছে, নদীর গতিবেগ দ্বিগুণ বেড়ে গেলে নদীর বহন ক্ষমতা ৬৪ গুণ বেড়ে যায়। একে ষষ্ঠঘাতের সূত্র বলা হয়।

১১)কিউসেক ও কিউমেক কাকে বলে? 

উত্তর- কিউসেক (Cusec) ও কিউমেক হল নদী প্রবাহের একক। নদীখাতের একটি নির্দিষ্ট অংশ দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যত ঘনফুট জল প্রবাহিত হয় তাকে কিউসেক এবং প্রতি সেকেণ্ডে যত ঘন মিটার জল প্রবাহিত হয় তাকে কিউমেক বলা হয়।

১২)নদী কিভাবে ক্ষয় কার্য সম্পন্ন করে? 

•উত্তর-  নদীর ক্ষয়কাজ (Erosion) : নদী চারটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষয়কাজ করে।

(i) জল প্রবাহ ক্ষয় (Hydraulic Action) : জলস্রোতের প্রচন্ড আঘাতে নদীখাতের উভয়পার্শ্ব ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।একে নদীর জলপ্রবাহ কাকে বলে। 

(ii) অবঘর্ষ (Corrasion) : নদীবাহিত শিলাখণ্ডের আঘাতে নদীখাত ক্ষয় হতে থাকে ও অমসৃণ হয়। একে নদীর অবঘর্ষ জনিত ক্ষয় বলে। 

(iii) ঘর্ষণ ক্ষয় (Attrition) : নদীবাহিত শিলাখন্ড পরস্পরের আঘাতে ছোট ছোট নুড়ি ও বালিতে পরিণত হয়। একে নদীর ঘর্ষণজনিত ক্ষয় বলে। 

(iv) দ্রবণ (Solution) : চুনাপাথর, জিপসাম, লবণ ইত্যাদি নদীর জলে গলে যায়।একে নদীর দ্রবণজনিত ক্ষয় বলে। 

উত্তর -নদীর ক্ষয়কাজের মাধ্যমে I ও V আকৃতির উপত্যকা, গিরিখাত, ক্যানিয়ন,জলপ্রপাত, নদীবাঁক বা মিয়েন্ডার, হাঁড়ির ন্যায় গর্ত বা পটহোল বা মন্থকুপ,কর্তিত শৈলশিরা ইত্যাদি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।

১৩)নদীর ক্ষয়জাত ভূমিরূপ গুলি কি কি? 

চিত্রক্ষয়জাত ভূমিরূপ

১৪)নদী কোন কোন প্রক্রিয়ায় বহন কার্য সম্পন্ন করে? 

উত্তর -• নদীর বহন কাজ (Transportation) : নদী চারটি প্রক্রিয়ায় বহন করে।

(i) লম্ফদান (Saltation) : নদী স্রোতের প্রবল টানে কিছু কিছু শিলাখণ্ড নদীখাতে বারবার ধাক্কা খেয়ে লাফাতে লাফাতে এগিয়ে চলে। 

(ii) ভাসমান (Suspension) :ছোট ছোট শিলাচূর্ণ, বালুকা প্রভৃতি জলস্রোতে ভাসতে ভাসতে পরিবাহিত হয়।

(iii) আকর্ষণ (Traction) : বড় বড় শিলাখণ্ডগুলি নদীখাতে জলের আকর্ষণে গড়াতে গড়াতে এগিয়ে চলে। 

(iv) দ্রবণ (Solution) : চুনাপাথর, জিপসাম, লবণ প্রভৃতি জলে দ্রবীভূত হয়ে পরিবাহিত হয়।

• 

১৫) নদীর সঞ্চয় কার্য বলতে কী বোঝো? 

উত্তর- নদীর অবক্ষেপণ বা   সঞ্চয় কাজ (Deposition) : নদী যতই সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যায় ততই তার বহন ক্ষমতা কমতে থাকে। নদীবাহিত বিভিন্ন নুড়ি, পাথর, বালি,কাদা, পলি ইত্যাদি নদীর দুপাশে, তলদেশে এবং মোহনার নিকটে জমা হতে থাকে।একে নদীর সঞ্চয় কাজ বলে। প্রধানত চারটি কারণে নদী সঞ্চয় করতে বাধ্য হয়। যথা

-(i) জলের পরিমাণ কমে গেলে। 

(ii) ভূমির ঢাল হ্রাস পেলে

 (iii) শিলা খণ্ডের পরিমাণ বেড়ে গেলে 

(iv) বহন ক্ষমতা হ্রাস পেলে নদী সঞ্চয় কাজ করে।

নদীর সঞ্চয় কাজের মাধ্যমে পলিশঙ্কু, পলল ব্যজনী, প্লাবনভূমি, স্বাভাবিক বাঁধ, নদীমঞ্চ ,অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, নদীচর, ব-দ্বীপ ইত্যাদি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।

১৬)নদীর কয়টি গতি ও কি কি? 

উত্তর- নদীর গতি (Courses of rivers)উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদীর তিনটি গতি থাকে। যথা(১) উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহ, (২) মধ্য গতি বা সমভূমি প্রবাহ এবং (৩) নিম্নগতি বা ব-দ্বীপ গতি প্রবাহ। 

১৬)আদর্শ নদী কাকে বলে? 

উত্তর- যে নদীর এই তিনটি গতি সুস্পষ্ট তাকে আদর্শ নদী বলে। যেমন –একটি আদর্শ নদী। গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত গঙ্গার উচ্চ গতি, হরিদ্বার থেকে রাজমহল পর্যন্ত গঙ্গার মধ্যগতি এবং রাজমহল থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত গঙ্গার নিম্নগতি। 

১৭)নদীর কোন কোন গতিতে কোন কোন ধরনের কাজ বেশি দেখা যায়? 

উত্তর -পার্বত্য গতিতে নদীর ক্ষয়কাজ, মধ্যগতিতে বহন ও সঞ্চয় কাজ এবং নিম্ন গতিতে সঞ্চয় কাজ বেশি দেখা যায়।।

১৮)নদী উপত্যকার বিকাশ সম্পর্কে লেখ। 

• নদী উপত্যকার বিকাশ (Development of river valley)

উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদী যে খাতের মধ্য দিয়ে জল বয়ে নিয়ে যায়, তাকে নদী উপত্যকা বলে। বিভিন্ন গতিতে নদী উপত্যকার আকৃতি ও গঠন ভিন্ন ভিন্ন প্রকার হয়।

চিত্র -বিভিন্ন গতিতে নদীর উপত্যকার আকৃতি 

• (১) উচ্চ গতি বা পার্বত্য প্রবাহ (Mountain| course) : নদী যখন পার্বত্য অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে চলে।তখন তাকে নদীর উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহ বলে। এই অংশেনদীর গতিপথের ঢাল খুব বেশি থাকে এবং নদী প্রবলবেগে নিচের দিকে ছুটে যায়। পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় অধিক হয়। পার্বত্য অংশে নদী উপত্যকা গভীর ও সংকীর্ণ হয়। নদীর এই অংশে I ও V আকৃতির উপত্যকা, গিরিখাত, ক্যানিয়ন, জলপ্রপাত, মন্থকূপ, কর্তিত শৈলশিরা ইত্যাদি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।

২) মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ (Plain course) : পার্বত্য অঞ্চল ছেড়ে নদী যখন সমভূমির উপর বয়ে চলে, তখন তাকে সমভূমি প্রবাহ বা মধ্যগতি বলে। এই অংশে নদীর ঢাল কম থাকে। ফলে নদীর গতিবেগ কমে যায় এবং নদীর ক্ষয় শক্তি খুব একটা থাকে না। প্রবাহ পথে কোন বাধা পেলে নদী এঁকে বেঁকে এগিয়ে চলে। এই অংশে নদী উপত্যকা চওড়া ও অগভীর হয়।

সমভূমি প্রবাহে পললশঙ্কু, পলল ব্যজনী নদী বাঁক, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, প্লাবনভূমি, স্বাভাবিক বাঁধ, নদীমঞ্চ  ইত্যাদি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।

3) নিম্নগতি বা ব-দ্বীপ প্রবাহ (Delta course) : নদী যখন মোহনার কাছাকাছি এসে পড়ে, তখন তাকে নিম্নগতি বা ব-দ্বীপ প্রবাহ বলা হয়। মোহনার দিকে নদী যতই এগোতে থাকে নদীর গতিবেগ ততই কমতে থাকে। তাই এখানে নদীর সঞ্চয়কার্যই   দেখা যায়। এই অংশে নদীর গভীরতা একেবারেই কমে যায় এবং নদী উপত্যকা খুব চওড়া হয়। নদীর এই গতিতে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ স্বাভাবিক বাঁধ প্লাবন সমভূমি, চরা বা দ্বীপ, ব-দ্বীপ, খাঁড়ি ইত্যাদি সৃষ্টি হয়।

Leave a Comment