ভারতের খনিজ সম্পদ [Mineral Resources of India]
ভারতের খনিজ সম্পদ(Mineral Resources of India)
প্রশ্ন (1) খনিজ কাকে বলে ?(what is minerals?)
• খনিজ সম্পদ : সাধারণভাবে, ভূ-গর্ভে বা খনি থেকে প্রাপ্ত বা উত্তোলিত পদার্থসমূহ খনিজ পদার্থ নামে পরিচিত।
জে. স্মিথের (J. Smith) ভাষায় বলা যায় – খনিজ সম্পদ হল প্রকৃতিতে প্রাপ্ত অজৈব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট এমন বস্তু যার রাসায়নিক উপাদান ও পারমাণবিক গঠন নির্দিষ্ট।
প্রশ্ন (2) আকরিক কাকে বলে ? What is ore ?
উত্তর- যে সব খনিজে অর্থনৈতিকভাবে অপ্রয়োজনীয় বস্তু অপেক্ষা প্রয়োজনীয় ধাতব মৌলের পরিমান বেশি এবং সুলভে ধাতু নিষ্কাশন করা যায় সেই সব খনিজকে আকরিক বলে। তাই সব আকরিক খনিজ হলেও সব খনিজ আকরিক নয়।
প্রশ্ন (3)খনিজ সম্পদ কয় প্রকার ও কি কি? How many types of mineral resources and what are they?
উত্তর –খনিজের শ্রেণিবিভাগ(Classification of minerals)
খনিজ সম্পদকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। .
a)ধাতব খনিজ (metallic minerals)যেসব খনিজ দ্রব্য থেকে গলিয়ে ধাতু নিষ্কাশন করা যায় তাদের ধাতব খনিজ বলে। যেমন- লোহা আকরিক, ম্যাঙ্গানিজ, টিন ইত্যাদি । ধাতব খনিজ কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
ক)লৌহ-বর্গীয়– (Ferrous metals)-যে খনিজ থেকে লোহা পাওয়া যায় তাকে লোহা বর্গীয় ধাতব খনিজ বলে ।যেমন-লৌহ আকরিক (-Iron ore)
খ)লৌহ-সঙ্কর–লোহাকে শক্ত করার জন্য লোহার সঙ্গে মেশানো যায় এমন খনিজ হল লৌহ সংকর খনিজ।যেমন- ম্যাঙ্গানিজ,নিকেল,টাংস্টেন,ক্রোমাইট
গ)অলৌহবর্গীয় (Non-ferrous)-যে খনিজে কোনো লোহা থাকে না তাদের অলৌহবর্গীয় ধাতব খনিজ বলে। যেমন- টিন,দস্তা,বক্সাইট ,তামা, সিসা, সোনা, রূপা ইত্যাদি।
(b)অধাতব খনিজ,(Non-metallic minerals)-যেসব খনিজ দ্রব্য থেকে নিষ্কাশন করলে নানারকম অধাতব পদার্থ ও উপজাত দ্রব্য পাওয়া যায় তাদের অধাতব খনিজ বলে। যেমন কয়লা, খনিজ তৈল, অভ্র ইত্যাদি।
অধাতব খনিজ পদার্থকে ৪ টি উপ বিভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
ক) জ্বালানি খনিজ – –কয়লা খনিজ তৈল, প্রাকৃতিক গ্যাস, ইউরেনিয়াম থোরিয়াম
খ)স্থাপত্য শিল্পে ব্যবহৃত খনিজ -মার্বেল চুনাপাথর জিপসাম।
গ)রাসায়নিক শিল্পে ব্যবহৃত খনিজ—লবণ, গন্ধক, পটাস
ঘ)অন্যান্য অধাতব খনিজ –গ্রাফাইট অভ্র
4) লৌহ আকরিকের ব্যবহার লিখ ।
উত্তর–ব্যবহার(uses of iron-ore) : বর্তমান যুগকে লৌহযুগ (Iron age) নামে অভিহিত করা হয়। কারণ লৌহের ব্যবহার ব্যাপক। কাঁচা লৌহা গলিয়ে তার সঙ্গে ম্যাঙ্গানিজ, ক্রোমিয়াম,টাংস্টেন, নিকেল প্রভৃতি মিশিয়ে যে ইস্পাত তৈরি হয় তা নানা কাজে ব্যবহৃত হয়।যেমন – নানারকম যন্ত্রপাতি, রেললাইন, সেতু, যানবাহন, অস্ত্রশস্ত্র, গৃহস্থালির সরঞ্জাম, কলকব্জা, কৃষিযন্ত্রপাতি ইত্যাদি লৌহ ও ইস্পাত থেকে প্রস্তুত হয়।
5) লৌহ আকরিক শ্রেণিবিভাগ কর ।
উত্তর– শ্রেণিবিভাগ(Classification of iron-ore) : লৌহের অনুপাত অনুসারে লৌহ-আকরিককে চারভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
(i) ম্যাগনেটাইট (Magnetite ) –এতে প্রায় ৭২% লৌহ থাকে। এর রঙ কালো। এটি উঁচু জাতের আকরিক। সবচেয়ে উৎকৃষ্ট।
(ii) হেমাটাইট (Haematite,) -এর রং লাল। এতে প্রায় ৭০% লোহা থাকে।এটিও উঁচু জাতের আকরিক।
(iii) লিমোনাইট (Limonite) -এর রঙ বাদামী। এতে প্রায় ৬০% লৌহ থাকে। একটি মাঝারি মানের আকরিক।
(iv) সিডেরাইট (Siderite,)- এর রঙ ধূসর বাদামী। এতে প্রায় ৪৮% লৌহথাকে। এটি নিকৃষ্ট মানের আকরিক। ভারতের অধিকাংশ লৌহ-আকরিক হেমাটাইট জাতীয়)
6) ভারতের কোথায় কোথায় লৌহ আকরিক পাওয়া যায়? .
উত্তর– ভারতের লৌহ আকরিক উত্তোলক অঞ্চল :(Iron Ore Producing Regions of India:)
(1) গোয়া (প্রথম) :সিরিগাও, বিচোলেম,
(2) ছত্তিশগড় (দ্বিতীয়):বাইলাডিলা,দাল্লিরাজহারা।
(3) কর্ণাটক (তৃতীয়): বাবাবুদান পাহাড়, বেলারি, চিকমাগালুর,কুদ্রেমুখ, হসপেট।
(4) ঝাড়খন্ড (চতুর্থ): চিরিয়া, নুয়ামুন্ডি, গুয়া, পানশিৱাবু্রু,হাজারিবাগ, ধানবাদ।
(5) উড়িষ্যা (পঞ্চম) : গুরুমহিযানী, সুলাইপাত, বাদাম পাহাড়,কিরিবুরু, ইত্যাদি।
(6) অন্ধ্রপ্রদেশ : কুড্ডাপা,, গুন্টুর, .
ভারতের লৌহ আকরিক উত্তোলক অঞ্চল :(Iron Ore Producing Regions of India:)
7) কয়লার শ্রেণিবিভাগ কর
উত্তর–শ্রেণিবিভাগ(classification of coal) কার্বনের তারতম্য অনুসারে কয়লাকে চার ভাগে ভাগ করা যায়।
– (১) অ্যানথ্রাসাইট (Anthrasite) : সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কয়লা, অ্যানথ্রাসাইটের রঙ উজ্জ্বল কালো। এতে প্রায় ৯০% – ৯৫% কার্বন বা অঙ্গার থাকে।
(২) বিটুমিনাস (Bituminus) : এটি দ্বিতীয় শ্রেণির কয়লা। রঙ কালো। এতে ৫০% – ৮৫% কার্বন থাকে। ভারতে এ জাতীয় কয়লার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।
(৩) লিগনাইট (lignite) – এটি নিকৃষ্টতম কয়লা। এর রঙ বাদামি। এতে প্রায় ৩৫% – 50% কার্বন থাকে।
(8) পীট (peat) : অপরিণত কয়লা। কার্বনের পরিমাণ ৩৫% এর কম।
8) কালো হিরে কাকে বলে এবং কেন ?
উত্তর-কয়লাকে কালো হীরা (Black diarnond) বলে।
হীরা যেমন মূল্যবান বস্তু ঠিক তেমনি বর্তমান যুগে কয়লার ব্যবহারের গুরুত্ব এত বেশি যে একে হীরার সঙ্গে তুলনা করে কালো হীরা (Black diarnond) বলে।
9) কয়লার ব্যবহার লিখ ।
উত্তর– কয়লার ব্যবহার(uses of coal) –(ক) কয়লা থেকে তাপবিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।,
(খ) বাষ্পীয় জাহাজ ও রেলইঞ্জিন চালাতে, বিভিন্ন ধাতু নিষ্কাশন করতে, ইট, টালি পুড়াতে, রাস্তা তৈরির পীচ গলাতে, শীতপ্রধান দেশে গৃহ উষ্ণ রাখতে কয়লা ব্যবহৃত হয়।
(গ) কয়লা থেকে প্রস্তুত কোক লৌহ ও ইস্পাত শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল।
(ঘ) কয়ল৷ গ্রামাঞ্চলে উনান জ্বালানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।
(ঙ) কয়লার ছাঁই সিমেন্ট শিল্পে কাজে লাগে।
• কোক কয়লা : কয়লার তাপ প্রদানের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কয়লাকে প্রচণ্ড উত্তাপ দিয়ে তার ভিতরের অসার পদার্থ, নষ্ট করে দেওয়া হয়। এরূপ কয়লাকে কোক কয়লা বলে।
10) কয়লার উপজাত দ্রব্য কি কি ?
উত্তর– উপজাত দ্রব্য (By products) : কয়লা থেকে কোলগ্যাস, অ্যামোনিয়া,ক্রিয়োজেট, বেনজল, টল্যুয়েন, ন্যাপথালিন, পীচ, আলকাতরা, স্যাকারিন,ফেনল, গন্ধক, কৃত্রিম তন্তু, কৃত্রিম রবার প্রভৃতি পাওয়া যায়। এগুলি বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন – কোলগ্যাস রান্নার কাজে, ক্রিয়োজেট কীটনাশক দ্রব্য প্রস্তুতে, অ্যামোনিয়া রাসায়নিক সার শিল্পে, বেনজল ওষুধ প্রস্তুতে, ট্যলুয়েন বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
11)ভারতের কয়লা উত্তোলক অঞ্চলগুলির নান লিখ ।
উত্তর-ভারতের কয়লা উত্তোলক অঞ্চল :(coal producing regions গঠনের ভূ-তাত্ত্বিক যুগ অনুসারে ভারতের কয়লাকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা
(১) গন্ডোয়ানা যুগের কয়লা (Gondwana coal) : প্রায় ২৮-৩০ কোটি বছর আগে কার্বোনিফেরাস যুগের শেষের দিকে এবং পারমিয়ান যুগের শুরুতে গন্ডোয়ানা কয়লা সৃষ্টি হয়। ভারতের প্রায় ৯০% কয়লা গন্ডোয়ানা যুগের। দামোদর, শোন, মহানদী,গোদাবরী, ওয়ার্ধা প্রভৃতি নদী উপত্যকায় গন্ডোয়ানা যুগের কয়লা পাওয়া যায়।
(ক) দামোদর উপত্যকার কয়লাক্ষেত্র : ঝাড়খন্ডের বোকারো, ঝরিয়া,গিরিডি, করণপুরা, কতরাস, রামগড়,পশ্চিমবঙ্গের রানীগঞ্জ, আসানসোল।ঝরিয়া ভারতের বৃহত্তম কয়লাখনি অঞ্চল।
(খ) শোননদী উপত্যকা : হুতার, ঔরাঙ্গাবাদ, ওমরিয়া।
(গ) মহানদী উপত্যকা : মধ্য প্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের কোরবা, বিলাসপুর চিরিমিরি, বিশ্রামপুর, সোহাগপুর, তাতাপানি, সোনাহাট প্রভৃতি এবং উড়িষ্যার তালচের, রামপুর।
(ঘ) গোদাবরী-ওয়ার্ধা নদী উপত্যকা : অন্ধ্রপ্রদেশের সিঙ্গারেণী, জলগাঁও তান্দুর, এবং মহারাষ্ট্রের চান্দা, বল্লারপুর, কাম্পতি ভারতে উত্তোলিত মোট কয়লার ১০% কয়লা টার্সিয়ারী
(২) টার্সিয়ারী যুগের কয়লা(Tertiary Coal) : আজ থেকে ৭-৮ কোটি বছরআগে এই কয়লার সৃষ্টি হয়। এ যুগের কয়লা লিগনাইট জাতীয়। আসামের মাকুম, নাজিরা, মেঘালয়ের গারো, খাসিয়া, জয়ন্তিয়া, জম্মু ও কাশ্মীরের কালাকোট ,নাগাল্যান্ডের এবং তামিলনাড়ুর সালেম ও অকাটে টাশিয়ারী যুগের কয়লা পাওয়া যায়।
রাজ্যভিত্তিক স্থান : ঝাড়খন্ড প্রথম, মধ্যপ্রদেশ দ্বিতীয়, পশ্চিমবঙ্গ তৃতীয় এবং উড়িষ্যা চতুর্থ।
বাণিজ্য : ভারত বিদেশে ৭% কয়লা রপ্তানি করে।
● কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড (Coal India Limited) : বর্তমানে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা খনিগুলি কোল, ইন্ডিয়া লিমিটেড’ নামে ভারত সরকারের মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত একটি সংস্থার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
12) খনিজ তৈল (PETROLEUM) কি ?
উত্তর– খনিজ তৈল বা পেট্রোলিয়াম (Mineral oil or petroleum) : Petroleum একটি ল্যাটিন শব্দ। Petra = শিলা এবং Oleum = তৈল। সুতরাং এর বাংলা প্রতিশব্দ হল শিলা তৈল (Rock oil)। স্পঞ্জে যেমন জল থাকে তেমনি সচ্ছিদ্রপাললিক শিলাস্তরে খনিজ তৈল থাকে বলে এর নাম হয়েছে শিলা তৈল (Rock oil)তাছাড়া খনি থেকে এই তেল পাওয়া যায় বলে এর নাম খনিজ তৈল।
13) তরল সোনা কাকে বলে এবং কেন ?
উত্তর–তরল সোনা (Liquid gold) : খনিজ তৈল বা পেট্রোলিয়ামকে তরলসোনা বলা হয়। কারণ সোনা যেমন মূল্যবান ও আদরের বস্তু তেমনি বর্তমান যুগে খনিজ তৈল দেশের একমাত্র শক্তি। এর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।খনিজ তেল থেকে বর্তমানে হাজার হাজার অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্য তৈরি করা হয়।খনিজ তৈলবিহীন দেশকে পঙ্গুদেশ বলে।
14)খনিজ তৈল সৃষ্টি কিভাবে হয়?
উত্তর–উৎপত্তি (Origin Mineral oil /Petroleum) অতিক্ষুদ্র সামুদ্রিক প্রাণী (ফোরামিনিফেরা) কোটি কোটি বছর ধরে পাললিক শিলাস্তরে চাপা পড়ে যায়। শিলাস্তরের চাপে ও নিচের তাপে প্রাণীগুলির দেহঃনিসৃত নির্যাস হাইড্রোজেন ও কার্বনের সংমিশ্রণে খনিজ তৈলের সৃষ্টি করে।
15)খনিজ তেলের ব্যবহার লিখ
উত্তর–খনিজ তৈলের গুরুত্ব ও ব্যবহার (Importance and uses) : খনি থেকে প্রাপ্ত তৈল সরাসরি ব্যবহার করা যায় না। এই তৈল পাকের মত পিচ্ছিল। একে অপরিশোধিত বা ক্রুড তৈল (Crud oil) বলে। তৈল শোধনাগারে পাইপের সাহায্যে অপরিশোধিত তৈল নিয়ে গিয়ে পরিশোধন করা হয় এবং নানা কাজে ব্যবহার করা হয়। অপরিশোধিত তৈল শোধন করে পেট্রোল,ডিজেল,কেরোসিন
,পিচ্ছিলকারক তৈল, প্রভৃতি দ্রব্য (Products) এবং পীচ, ন্যাপথা, থ্রোপিলিন,ভেসলিন, প্যারাফিন, গ্যাস প্রভৃতি উপজাত দ্রব্য (By products) পাওয়া যায়।পেট্রোল ও ডিজেল যানবাহন চালাতে, এগুলি নানা কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন- কেরোসিন স্টোভ ও আলো জ্বালানোর কাজে, পিচ্ছিলকারক তৈল ‘কলকব্জা,মেশিনপত্র পরিষ্কার করতে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া ন্যাপথা থেকে কৃত্রিম সার, রেশম,নাইলন,পলিথিন, পলিয়েস্টার, প্রোপিলিন থেকে কৃত্রিম রবার, টায়ার, ওষুধ,প্রসাধনী সামগ্রী; ভেসলিন থেকে ওষুধ প্রস্তুত হয়। প্যারাফিন মোম, মোমবাতি,সাবান এবং পীচ বা কৃত্রিম অ্যাসফল্ট রাস্তা পাকা করতে ব্যবহৃত হয়।
17)ভারতের কোথায় কোথায় খনিজ তেল পাওয়া যায় ?
ভারতের খনিজ তৈল উত্তোলক অঞ্চল (Petroleum producing Area)
১৮৬৭ সালে আসামের ডিগবয় অঞ্চলের ‘মাকুম’ নামক স্থানে ভারতের সর্বপ্রথম তৈলখনি আবিষ্কৃত হয়। কিছুদিন পরে এটি বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৮৯ সালে ডিগবয়ে খননকার্য শুরু হয়। স্বাধীনতার পূর্বে একমাত্র ডিগবয়ই ছিল ভারতের খনিজ তৈল উত্তোলক অঞ্চল। স্বাধীনতার পর ONGC (Oil and Natural Gas Commission) ১৯৫৬ সালে স্থাপন করা হয় এবং ভারতের বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন তৈলখনি আবিষ্কৃত হয়। বর্তমানে ভারতের চারটি অঞ্চলে খনিজ তৈল পাওয়া যায়।
(১) (ক) আসামের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা : ডিগবয়, বাপ্পাপুং, হাংসাপুং, লাকোয়া,বুদ্রসাগর, মোরান, নাহারকাটিয়া, হুগরিজান, দুলিয়াজান, শিবসাগর প্রভৃতি। এদের মধ্যে ডিগবয় ভারতের প্রাচীনতম ও গভীরতম তৈলখনি।
(খ) সুরমা উপত্যকাঃ বদরপুর, মাসিমপুর, পাথারিয়া ইত্যাদি।
(২) গুজরাট : (ক) কাম্বে অঞ্চল লুনেজ, বাকল, ঢোলকা, মেসানা।
(খ) অ্যাকেলেশ্বর : কোসাম্বা, অ্যাড্রেঙ্কলেশ্বর।
(গ) আমেদাবাদ : কালোল, সাদা, ওয়াভেল, কাদি ও নওয়াগ্রাম।
(৩) মহারাষ্ট্র –মুম্বাই হাই
16)ভারতের কোথায় কোথায় খনিজ তৈল অনুসন্ধান চলছে?
• সম্ভাবনাময় খনিজতৈল অঞ্চল : ONGC এবং OIL ভারতের খনিজ তেলের অনুসন্ধান চালাচ্ছে। ভারতের খনিজ তৈল প্রাপ্তির সম্ভাবনাময় অঞ্চলগুলি হল –
(i) দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চল ও মহীসোপান এলাকা
(ii) গাঙ্গেয় সমভূমি
(iii) আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের উপকূল অঞ্চল,
(iv) সুন্দরবন এলাকা
(v) ত্রিপুরা সমভূমি।
•
17))ভারতের কয়েকটি খনিজ তৈল শোধনাগারের নাম লেখ।
ভারতের তৈল শোধনাগার (Oil Refineries) : ভারতের তৈল শোধনাগারগুলি হল –
১)বারৌনী (বিহার),
২)ডিগবয়, (আসাম)
৩)গৌহাটি(আসাম)
৪)বঙ্গাইগাঁও (আসাম);
৫)মুম্বাই HPCL (মহারাষ্ট্র),
৬)মুম্বাই BPCL (মহারাষ্ট্র),
৭)কয়ালি, (গুজরাট),
৮)হামিরা (গুজরাট),
৯)কোচি (কেরালা)
১০)হলদিয়া (পশ্চিমবঙ্গ),
১১)বিশাখাপত্তনম(অন্ধ্রপ্রদেশ),
১২) মথুরা (উত্তরপ্রদেশ),
১৩)পানিপথ (হরিয়ানা),
১৪)চেন্নাই (তামিলনাড়ু)
১৪)ম্যাঙ্গালোর (কর্ণাটক),
১৫)কাবেরী বেসিন (তামিলনাড়ু)
• ভারতের বৃহত্তম তৈলশোধনাগার : গুজরাটের হামিরা (উৎপাদন ক্ষমতায়)সরকারি।
বেসরকারি হল গুজরাটের জামনগর
• বাণিজ্য : ভারত প্রতি বছর ইরাক, ইরান, সৌদি আরব ও অন্যান্য দেশ থেকে খনিজ তৈল আমদানি করে।
• ভারতের দুটি সরকারী সংস্থা : ONGC- Oil and Natural Gas Commission (1955) । সদর দপ্তর দেরাদুনে অবস্থিত।
OIL : Oil India Limited (1959)
• প্রাকৃতিক গ্যাস (Natural Gas): পেট্রোলিয়াম খনি থেকে প্রাপ্ত গ্যাসকে প্রাকৃতিক গ্যাস বলে।