অশ্বমণ্ডল (LITHOSPHERE)
ভূমিকম্প (EARTH QUAKES)
(১)ভূমিকম্প কাকে বলে
উত্তর – ভূমিকম্প (Earthquakes ) : জ্ঞাত অথবা অজ্ঞাত শক্তি দ্বারা উৎপন্ন পৃথিবীর আকস্মিক কম্পনকে ভূমিকম্প বলে। ভূমিকম্প একপ্রকার হৃদয়বিদারক প্রাকৃতিক ঘটনা।
•(২) ভূমিকম্পের কেন্দ্র ও উপকেন্দ্র কাকে বলে?
উত্তর -ভূমিকম্পের কেন্দ্র ও উপকেন্দ্র (centre and Epicentre): ভূ-গর্ভের যেখানে প্রথম কম্পন শুরু হয়, সেই স্থানকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বলে। এটি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে সর্বাধিক ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করে। ভূমিকম্পের কেন্দ্র বরাবরউপরে অবস্থিত ভূ-পৃষ্ঠস্থ স্থানটিকে ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র বলে।
(৩)সিসমোগ্রাফ কি?
•উত্তর- সিমোগ্রাফ বা ভূমিকম্পলিখ যন্ত্র(Seismograph) : যে যন্ত্রের সাহায্যে ভূ-কম্প তরঙ্গের গতিবিধির লেখচিত্র পাওয়া যায়,তাকে ভূকম্পলিখ যন্ত্র বা সিসমোগ্রাফ বলে।
(৪) রিখটার স্কেল (Richter scale) কাকে বলে ?
উত্তর- ভূমিকম্পের তীব্রতা পরিমাপকারী স্কেলকে রিক্টার স্কেল বলে। রিক্টার নামে এক মার্কিন বিজ্ঞানী ১৯৩৫ সালে এই স্কেলটি আবিষ্কার করেন। এই স্কেলে ১ থেকে ১০টি ভাগ থাকে। সিসমোগ্রাফ যন্ত্রে এটি বসানো থাকে।
•(৫) মার্সেলি স্কেল (Marsali scale) : কী?
উত্তর -মার্সেলি নামে এক বিজ্ঞানী ভূমিকম্পের তীব্রতা মাপার জন্য যে স্কেলটি আবিষ্কার করেন সেটি মার্সেলি স্কেল নামে পরিচিত। এতে ১ থেকে ১২টি ভাগ থাকে।
(৬) ভূমিকম্পের কারণ লিখ।
•উত্তর – ভূমিকম্পের কারণ (Causes of Earthquake) : নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য ভূ-পৃষ্ঠে ভূমিকম্প হয়।
(১) আধুনিক ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে সঞ্চরণশীল পাত বা প্লেটগুলি পরস্পরের কাছ থেকে সরে যাবার ফলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
(২)আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ভূ-ত্বক কেঁপে উঠে।
(৩) ভূ-গর্ভে সঞ্চিত জলীয় বাষ্পের প্রবল উর্ধ্বমুখী চাপের প্রভাবে ভূমিকম্প হয়ে থাকে।
(৪) ধস্ কিংবা হিমানী,সম্প্রপাতের জন্য অনেক সময় ভূ-কম্প অনুভূত হয়।
(৫) ভূ-অভ্যন্তরস্থিত শিলাসমূহের তাপবিকিরণজনিত সঙ্কোচনের ফলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।
(৬) নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলে গঠনকার্য অনবরত চলতে থাকায় সেখানে প্রায়ই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
(৭)কোন কারণে ভূ-গর্ভে বড় ধরনের শিলাচ্যুতি ঘটলে ভূমিকম্প হয়ে থাকে।
(৮)চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে গুহার ছাদ ধসে পড়লে ঐ অঞ্চলে ভূ-কম্প হয়।
(৯) সমুদ্রগর্ভে। অবক্ষেপণের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে চাপের তারতম্য দেখা যায় এবং ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
(১০) উল্কাপাত, পারমাণবিক বিস্ফোরণ, ডিনামাইট বিস্ফোরণ কৃত্রিম জলাধার নির্মাণ প্রভৃতি ভূ-কম্প সৃষ্টি করে।
(৬) ভূমিকম্পের ফলাফল লেখ।
ভূমিকম্পের ফল বা প্রভাব (Effect ofEarthquake) :
(১) ভূমিকম্পের ফলে বহুসংখ্যক ঘরবাড়ি ধসে যায় এবং মানুষ ও অন্যান্য ভীবজন্তুর প্রাণহানি ঘটে।
(২) রাস্তাঘাট, গাছপালা, কৃষিক্ষেত্র ইত্যাদি ধ্বংস হয়ে যায়।
(৩) নদীর গতি পাল্টে যায় কিংবা নদী শুকিয়ে যায়।
(৪) ভূ-পৃষ্ঠে ফাটল, চ্যুতি ও ভাঁজের সৃষ্টি হয়।
(৫) সমুদ্র উপকূল উত্থিত কিংবা অর্ধনমিত হয়।
(৬) সমুদ্রের নিচে ভূমিকম্পহলে প্রবল ঢেউ-এর সৃষ্টি হয় এবং এই ঢেউ উপকূলভাগ প্লাবিত করে বন্যার সৃষ্টি করে।ভূ-কম্পজনিত সামুদ্রিক ঢেউ জাপানে সুনামি (Tsunami ) নামে পরিচিত।
(৭)ভূমিকম্পের ফলে মূল্যবান খনিজ সম্পদ ভূ-পৃষ্ঠের সন্নিকটে চলে আসে।
(৮) গাছপালা ভূ-গর্ভে চাপা পড়ে গিয়ে কয়লার সৃষ্টি করে।
• ৭) পৃথিবীর প্রধান প্রধান ভূকম্প বলয় গুলির নাম লেখ।
উত্তর -ভূমিকম্প বলয় বা পৃথিবীর ভূমিকম্প প্রবণ-অঞ্চল : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকম্প সমীক্ষা কেন্দ্রের মতে পৃথিবীতে প্রধান তিনটি ভূমিকম্প বলয় আছে।
●(১) প্রশাত্তমহাসাগরীয় ভূমিকম্পনবলয় (Pacific Belt) : পৃথিবীর প্রধানও বৃহত্তম ভূ-কম্পন বলয়টি প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বদিকে আন্দিজ পর্বতের দক্ষিণ থেকে শুরু করে উত্তরে রকি পার্বত্যঅঞ্চল,অ্যালুশিয়ান, কামচাটকা, জাপান,
ফিলিপাইনস্ প্রভৃতি দ্বীপপুঞ্জ হয়ে পশ্চিমে পূর্ব ভারতীয় দ্বীপ পুঞ্জ পর্যন্ত প্রসারলাভ করেছে।
● (২) ভূ-মধ্য পার্বত্য ভূ-কম্পনবলয় (Mid world mountain Belt) : এই বলয়টি ইউরোপের আল্পস পর্বতমালা থেকে শুরু করে ভূ-মধ্যসাগরের উত্তরাংশ দিয়ে ইরান মালভূমি, হিমালয় পর্বতমালা ও উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড়ী অঞ্চল হয়ে পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত প্রসারিত।
• (৩) মধ্য-আটলান্টিক ভূমিকম্পনবলয় (Mid Atlantic Belt) : এইবলয়টি মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা বরাবর প্রসারিত হয়েছে।
• ভূ-কম্পন প্রবণ এলাকা :
(১) নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলে (যথাহিমালয়, আল্লাস, রকি, আন্দিজ, প্রভৃতি গঠনকার্য চলছে বলে সেখানে তাধিক ভূমিকম্প হয়।
(২) জাপান, ইন্দোনেশিয়া, নিউজিল্যাণ্ডে ভূমিকম্প খুব বেশি হয়। কারণ, এখানকার উপকূল ভাগ খাড়া, এবং আগ্নেয়গিরির সংখ্যা বেশি।
পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জাপানে ভূমিকম্প হয়। তাই জাপানকে ‘ভূমিকম্পের দেশ’ বলে। এই দেশে বছরে গড়ে ৭৫০০ বারভূমিকম্প হয়ে থাকে।
•
সম-ভূকম্পন রেখা : একই রকম কম্পবিশিষ্ট অঞ্চল গুলিকে যে বৃত্তাকার কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করা হয়, তাকে সমভূকম্পন রেখা বলে।
● পৃথিবীর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্প :
(i) ১৯৯৩ সালের মহারাষ্ট্রের লাটুর ও ওসমানাবাদ অঞ্চলে যে ভূমিকম্প হয় তাতে প্রায় ৩০,০০০ লোক হতাহত হয়েছিল।
(ii) গুজরাটের ভুজ ও অহমদাবাদ অঞ্চলে ২০০১ সালে ভূমিকম্পের ফলে প্রায় ১,৫০,০০০ লোক নিহত হন। (iii) ১৯৯০ সালে ইরানে ভূমিকম্পের ফলে প্রায় ৩৬,০০০ লোক মারা যান।