ভূ-পৃষ্ঠে কোন স্থানের অবস্থান নির্ণয় – অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা (DETERMINATION OF THE LOCATION OF A PLACE ON THE EARTH SURFACE..
সূচনা (Introduction) : পৃথিবীর আকৃতি গোল ও বিশাল। ভূ-পৃষ্ঠে কোন স্থানের অবস্থান নির্ণয় করতে হলে রৈখিক দূরত্ব মাপা ঠিক নয়। কারণ বিশাল পৃথিবীতে এটা যেমন অসম্ভব, তেমনি আবার এতে কিছু ভুল থেকে যায়। তাইভূ-পৃষ্ঠের কোন স্থানের অবস্থান কৌণিক দূরত্বে পরিমাপ করা হয়। কৌণিক দূরত্ব প্রকাশিত হয় অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমার সাহায্যে। এর জন্য নিরক্ষরেখা ও মূলমধ্যরেখা জানা বিশেষ প্রয়োজন।
প্রশ্ন 1) রৈখিক দূরত্ব কাকে বলে?
উত্তর- রৈখিক দূরত্ব : কোন সমতল জায়গায় যে কোন দুটি স্থানকে ফিতে দিয়ে মেপে যে দূরত্ব পাওয়া যায়,তাকে রৈখিক দূরত্ব বলে। যেমন – আদ্রা থেকে পুরুলিয়ার রৈখিক দূরত্ব হলো 40 কিলোমিটার।
2) কৌণিক দূরত্ব কাকে বলে?
পৃথিবী পৃষ্ঠের যে কোন দুটি স্থান থেকে ভূ-কেন্দ্র পর্যন্ত দুটি ব্যাসার্ধ কল্পনা করলে ভূ-পৃষ্ঠে যে কোণের সৃষ্টি হয়, তা হল কৌণিক দূরত্ব। এই দূরত্বকে (°) ডিগ্রীতে প্রকাশ করা হয়। 1°= 60(মিনিট) এবং 1′ = 60″ (সেকেন্ড)।কৌণিক দূরত্ব 1° = 111.1কি.মি রৈখিক দূরত্ব।
প্রশ্ন (২) নিরক্ষরেখা কাকে বলে?
উত্তর- নিরক্ষরেখা বা বিষুব রেখা (Equator) •গোলাকার পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণে দুটি স্থির বিন্দু আছে। উত্তরের স্থির বিন্দুটিকে সুমেরু এবং দক্ষিণের স্থির বিন্দুটিকে কুমেরু বলা হয়। এই সুমেরু ও কুমেরু বিন্দু থেকে সমান দূরেপৃথিবীর ঠিক মাঝখানে যে বৃত্তাকার কাল্পনিক রেখা পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে ঘিরে রেখেছে তাকে নিরক্ষরেখা বলে।এর মান 0°।
প্রশ্ন (৩)নিরক্ষরেখার অপর নাম কি?
উত্তর- নিরক্ষরেখার অপর নাম বিষুবরেখা। “বিষুব’শব্দের অর্থ সমান। যেহেতু এই রেখার উপর দিন রাত্রি সমান এবং রেখাটি পৃথিবীকে উত্তর-দক্ষিণেসমান দুটি ভাগে ভাগ করেছে, তাই একে বিষুবরেখা বলা হয়। নিরক্ষরেখা হল একটি অক্ষরেখা।পৃথিবীতে যতগুলি অক্ষরেখা আছে তার মধ্যে নিরক্ষরেখার পরিধি সবচেয়ে বেশি। তাই নিরক্ষরেখাকেমহাবৃত্ত (great circle )বলে।
প্রশ্ন (৪)নিরক্ষীয় তল কাকে বলে?
উত্তর- নিরক্ষরেখা ও পৃথিবীর কেন্দ্র যে তলে অবস্থিত, তাকে নিরক্ষীয় তল বলে।
প্রশ্ন (৫)উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধ কাকে বলে?
উত্তর •– উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধ : নিরক্ষরেখা পৃথিবীকে উত্তর-দক্ষিণ সমান দুটি ভাগে ভাগ করেছে। উত্তর দিকের অংশকে উত্তর গোলার্ধ এবং দক্ষিণ দিকের অংশকে দক্ষিণ গোলার্ধ বলে।
প্রশ্ন (৬)অক্ষাংশ কাকে বলে?
উত্তর –অক্ষাংশ (Latitude) : নিরক্ষরেখা থেকে উত্তরে কিংবা দক্ষিণে অবস্থিত কোন স্থানের কৌণিক দূরত্বকে ঐ স্থানের অক্ষাংশ বলে। অর্থাৎ ভূ-পৃষ্ঠের কোন স্থান থেকে পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত যদি একটি রেখা টানা হয়, তবে ঐ রেখা নিরক্ষীয় তলের সঙ্গে যে কোণ উৎপন্ন করবে, সেই কোণই হল ঐ স্থানের অক্ষাংশ।নিরক্ষরেখা থেকে অক্ষাংশ গণনা করা হয়। তাই নিরক্ষরেখার অক্ষাংশ O°
প্রশ্ন (৭) অক্ষাংশ কে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কি কি?
উত্তর -অক্ষাংশকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
(১) নিম্নঅক্ষাংশ – ০° থেকে ৩০°
(২) মধ্যঅক্ষাংশ – ৩০° থেকে ৬০°
(৩) উচ্চঅক্ষাংশ – ৬০° থেকে ৯০°
প্রশ্ন (৮)কোন স্থানের অক্ষাংশ কিভাবে নির্ণয় করা হয়?
উত্তর – অক্ষাংশ নির্ণয় : পৃথিবীর কেন্দ্রে গিয়ে কোন স্থানের অক্ষাংশ নির্ণয় করা সম্ভব নয়। তাই উত্তরগোলার্ধে ধ্রুবতারা এবং দক্ষিণ গোলার্ধে হ্যাডলির অকট্যান্টের সাহায্যে কোন স্থানের অক্ষাংশ নির্ণয় করা যায়। এক্ষেত্রে নক্ষত্রগুলোর উন্নতি কোণ লক্ষ্য করা হয়। যেমন -উত্তর মেরু বা সুমেরুবিন্দুতে ধ্রুবতারাকে ৯০° উন্নতি কোণে লক্ষ্য করা যায়। সুতরাং সুমেরুবিন্দুর অক্ষাংশ ৯০°। দিনের বেলায় মেরু নক্ষত্র দেখা যায় না বলে সূর্যের উন্নতি কোণের সাহায্যে কোন্ স্থানের অক্ষাংশ নির্ণয় করা হয়। সেক্সট্যান্ট (sextant) যন্ত্র সূর্য ও ধ্রুবতারার উন্নতি কোণ মাপতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন (৯) অক্ষরেখা কাকে বলে? অক্ষরেখার বৈশিষ্ট্য লেখ।
• অক্ষরেখা (parallels of latitude) : ভূ-পৃষ্ঠের উপর একই অক্ষাংশবিশিষ্ট স্থানগুলিকে কোন কাল্পনিকরেখা দ্বারা যুক্ত করলে, যে বৃত্তাকার রেখা তৈরি হয়, তাকে অক্ষরেখা বা সমাক্ষরেখা বলে।
• অক্ষরেখার বৈশিষ্ট্য : (১) অক্ষরেখাগুলি পূর্ণবৃত্ত এবং পরস্পর সমান্তরাল।
(২) এগুলি ১° অন্তর একে অপরের উত্তরে কিংবা দক্ষিণে অবস্থিত।
(৩) অক্ষরেখাগুলি পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টিত।
(৪) অক্ষরেখাগুলির পারস্পরিক দূরত্ব সমান। তাই এদের সমাক্ষরেখা বলে।
(৫) অক্ষরেখাগুলির পরিধি সমান নয়। নিরক্ষরেখার পরিধি সবচেয়ে বেশি। এই রেখা থেকে যতই উত্তরে কিংবা দক্ষিণে যাওয়া যায় অক্ষরেখার পরিধি ততইকমতে থাকে।
(৬) নিরক্ষরেখা থেকে অক্ষরেখা গণনা করা হয়। নিরক্ষরেখার উত্তরে ৮৯টি এবং দক্ষিণে ৮৯টি অক্ষরেখা আছে। ৯০° উত্তর ও ৯০° দক্ষিণ রেখা নয়। এগুলি বিন্দু।
(৭) অক্ষরেখাগুলির পারস্পরিক রৈখিক দূরত্ব ১১১.১ কি.মি.
(৮) অক্ষরেখাগুলির কৌণিক মাপ ৩৬০°
(৯) সর্বোচ্চ অক্ষাংশ ৯০°
প্রশ্ন( ১০) পৃথিবীর প্রধান প্রধান অক্ষরেখা গুলির নাম লেখ।
উত্তর -পৃথিবীর প্রধান প্রধান অক্ষরেখাগুলি হল –
(১) নিরক্ষরেখা (Equator)
(২) কর্কটক্রান্তি রেখা (Tropic of cancer)
(৩) মকরক্রান্তি রেখা(Tropic of capricorn
(৪) সুমেরুবৃত্ত (Arctic circle)
(৫) কুমেরুবৃত্ত (Antartic circle)।
প্রশ্ন (১১)-দুটি অক্ষরেখার মধ্যে পারস্পরিক ব্যবধান সর্বত্র সমান থাকে না কেন?
উত্তর-পৃথিবীর গড় পরিধি ৪০,০০০ কি.মি এবং কৌণিক পরিমাপ৩৬০°। সুতরাং দুটি অক্ষরেখার পারস্পরিক রৈখিক ব্যবধান ৪০,০০০÷ ৩৬০ = ১১১.১ কিমি.। পৃথিবীর আকৃতি অভিগত গোলক হওয়ার জন্য দুটি অক্ষরেখার পারস্পরিক রৈখিক ব্যবধান সর্বত্রসমান নয়। যেমন – নিরক্ষরেখার(0°) নিকট এই দূরত্ব ১১০.৫ কি.মি. ৩০° অক্ষরেখার নিকট ১১০.৮ কি.মি., ৬০° অক্ষরেখার নিকট ১১৪.৪ কি.মি., এবং ৮৯° অক্ষরেখায় ১১৭.৭কি.মি.। নিরক্ষরেখা থেকে উভয় মেরুর দিকে দুটি অক্ষরেখার মধ্যে পারস্পারিক রৈখিক ব্যবধান ক্রমশ বাড়তে থাকে।
প্রশ্ন (১২)-মূলমধ্যরেখা বা মূলদ্রাঘিমারেখা (The prime meridian) : কাকে বলে?
উত্তর -মূলমধ্যরেখা পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে দুটি সমান ভাগে ভাগ করে পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের সৃষ্টি করেছে। লন্ডন শহরের পাশে গ্রীণিচ মানমন্দিরের ওপর দিয়ে যে কাল্পনিক অর্ধ বৃত্তরেখা সুমেরু ও কুমেরু বিন্দুর মধ্যে সংযোগ রক্ষা করেছে, তাকে মূলমধ্যরেখা বলে। এই কাল্পনিক রেখাটি পৃথিবীর কেন্দ্রে শূন্য (0°) ডিগ্রী কোণ উৎপন্ন করে। মূলমধ্যরেখার পূর্ব অংশকে পূর্ব গোলার্ধ এবং পশ্চিম অংশকে পশ্চিম গোলার্ধ বলা হয়। মূলমধ্যরেখার বিপরীত দিকে ১৮০° দ্রাঘিমারেখা অবস্থিত। ১৮০° পূর্ব ও পশ্চিম একটিই দ্রাঘিমারেখা। এটি আন্তর্জাতিক তারিখরেখা নামে পরিচিত।
প্রশ্ন (১৩) দ্রাঘিমা বা দেশান্তর কাকে বলে?
উত্তর –মূলমধ্যরেখা থেকে পূর্ব কিংবা পশ্চিমে অবস্থিত কোন স্থানের কৌণিক দূরত্বকে ঐ স্থানের দ্রাঘিমা বা দেশান্তর বলে। দ্রাঘিমার পার্থক্যের ফলে দেশের ও সময়ের পার্থক্য ঘটে বলে দ্রাঘিমার অপর নাম দেশান্তর
প্রশ্ন (১৪)পূর্ব-পশ্চিম দ্রাঘিমা কাকে বলে?
উত্তর –পূর্ব ও পশ্চিম দ্রাঘিমা : মূলমধ্যরেখা (0°) থেকে পূর্বদিকে ১৮০° পর্যন্ত বিস্তৃত দ্রাঘিমাকে পূর্ব দ্রাঘিমা এবং পশ্চিমদিকে ১৮০° পর্যন্ত বিস্তৃত দ্রাঘিমারেখাকে পশ্চিম দ্রাঘিমা বলে।
প্রশ্ন (১৫) দ্রাঘিমা রেখা বা মধ্যরেখা কাকে বলে?
উত্তর -দ্রাঘিমা রেখা (Meridians) : একই দ্রাঘিমা বিশিষ্ট স্থানগুলি যে অর্ধবৃত্তাকার কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত, তাকে দ্রাঘিমারেখা বা মধ্যরেখা বা দেশাত্তররেখা বলে।মূলমধ্যরেখা একটি দ্রাঘিমারেখা। এর মান 0° (শূন্য ডিগ্রী)।
প্রশ্ন (১৬) দ্রাঘিমারেখার বৈশিষ্ট্য লিখ।
উত্তর –দ্রাঘিমারেখার বৈশিষ্ট্য ঃ (১)দ্রাঘিমারেখাগুলি উত্তর-দক্ষিণে বেষ্টিত এবংঅর্ধবৃত্তাকার।
(২) এগুলির দৈর্ঘ্য সমান।
(৩) প্রতিটি দ্রাঘিমারেখার কোণের সমষ্টি ১৮০°
(৪) দ্রাঘিমারেখাগুলি পরস্পর সমান্তরাল নয়।
(৫) এগুলি ১° অন্তর একে অপরের পূর্ব বা পশ্চিমে অবহিত।
(৬)দ্রাঘিমারেখাগুলির পারস্পরিক ব্যবধান নিরক্ষীয় অঞ্চলে সর্বাধিক এবং উভয় মেরুবিন্দুতে নেই বললেই চলে।
(৭) একই দ্রাঘিমারেখায় সর্বত্র স্থানীয় সময় এক হয়।
প্রশ্ন (১৭)কিভাবে কোন স্থানের দ্রাঘিমা নির্ণয় করা হয়?
উত্তর – দ্রাঘিমা নির্ণয় : সাধারণত দু-ভাবে দ্রাঘিমা নির্ণয় করা হয়
(১) সময়ের পার্থক্য অনুসারে (২) গ্রিনিচের সময় অনুসারে
(১) সময়ের পার্থক্য অনুসারে দ্রাঘিমা নির্ণয় ঃ এক্ষেত্রে দুটি স্থানের সময়ের পার্থক্য এবং একটি স্থানের দ্রাঘিমা জানা দরকার। আমরা জানি প্রতি ডিগ্রী দ্রাঘিমারপার্থক্যে সময়ের পার্থক্য ৪ মিনিট। সুতরাং দুটি স্থানের সময়ের পার্থক্য যদি ১২ মিনিটহয় এবং কোন একটি স্থানের দ্রাঘিমা ৩০° হয় তবে অপর স্থানটির দ্রাঘিমা হবে ২৭ পূর্ব বা পশ্চিম কিংবা ৩৩° পূর্ব বা পশ্চিম।
● (২) গ্রীনিচের সময় দ্বারা : (0° (শূন্য ডিগ্রী) দ্রাঘিমায় অবস্থিত গ্রীনিচের সময় অনুসারে ব্রুনোমিটার (Chronometer) নামক ঘড়ি চলতে থাকে। অর্থাৎ ক্রনোমিটার হল গ্রীনিচের সময় নির্ধারক ঘড়ি। গ্রীনিচ ও অন্য কোন স্থানের সময় জানা থাকলে।সময় এই উভয় স্থানের সময়ের পার্থক্য বের করতে হবে।সেই স্থানের দ্রাঘিমা নির্ণয় করা যায়। এক্ষেত্রে প্রথমে গ্রীনিচের সময় এবং প্রদত্ত স্থানের সময় এই উভয় স্থানের সময়ের পার্থক্য বের করতে হবে।
প্রশ্ন (১৮)দ্রাঘিমার সঙ্গে সময়ের সম্পর্ক দেখাও।
উত্তর • দ্রাঘিমার সঙ্গে সময়ের সম্পর্ক (Relationship between longitude and time) : দ্রাঘিমা ও সময় পরস্পরের সঙ্গে বিশেষভবে সম্পর্কযুক্ত। প্রতি ডিগ্রী দ্রাঘিমা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ৪ মিনিট সময়ের পার্থক্য ঘটে। পৃথিবীর কৌণিক মাপ ৩৬০ ডিগ্রী। পৃথিবী ২৪ ঘন্টায় একবার নিজের চারিদিকে অর্থাৎ 360° আবর্তন করে।
৩৬০°যেতে পৃথিবীর সময় লাগে ২৪ ঘন্টা ১৪৪০মিনিট
১° যেতে পৃথিবীর সময় লাগে ১৪৪০/৩৬০ = ৪মিনিট
দ্রাঘিমার সঙ্গে সময়ের সম্পর্ক
প্রশ্ন (১৯)দ্রাঘিমা রেখাগুলিকে মধ্যরেখা ও দেশান্তররেখা বলে কেন?
উত্তর- দ্রাঘিমারেখাগুলিকে মধ্য রেখা বলে কারণ একই দ্রাঘিমারেখার উপর অবস্থিত সমস্ত স্থানে সূর্য একই সময়ে মধ্য আকাশে সর্বোচ্চ অবস্থানে আসে। দ্রাঘিমারেখাগুলি আবার দেশান্তর রেখা নামে পরিচিত। কারণ দ্রাঘিমারেখার সাহায্যে বোঝা যায় একটি দেশ মূলমধ্যরেখার কতটা পূর্বে বা পশ্চিমে অবস্থিত।
প্রশ্ন (২০)অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার প্রয়োজনীয়তা লিখ।
উত্তর -অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার প্রয়োজনীয়তা :
(১) অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার সাহায্যে কোন স্থানের অবস্থান নির্ণয় করা যায়। অবস্থান জানা থাকলে ঐ স্থানের ভৌগোলিক পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা সম্ভব।
(২) সমুদ্রে বিপদগ্রস্ত জাহাজকে অতি সহজেই উদ্ধার করা যায়। (৩) দ্রাঘিমারেখা কোন স্থানের সময় নির্ধারণে সাহায্য করে। (৪) আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিমান ও জাহাজ চালানোর জন্য এগুলি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
২১) অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমা রেখার পার্থক্য লিখ।
অক্ষরেখা | দ্রাঘিমারেখা | |
পার্থক্য চিত্র |
অক্ষরেখা | দ্রাঘিমারেখা | |
১)সংজ্ঞা | একই অক্ষাংশ বিশিষ্ট কাল্পনিক রেখাগুলিকে অক্ষরেখা বলে | একই দ্রাঘিমাবিশিষ্ট কাল্পনিক রেখাগুলিকে দ্রাঘিমারেখা বলে ? |
২)আকার | পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টিত এবং পূর্ণ গোলাকার। | উত্তর-দক্ষিণে বেষ্টিত এবং অর্ধগোলাকার। |
৩)সমান্তরাল | পরস্পর সমান্তরাল। | পরস্পর সমান্তরাল নয়। |
৪)পরিধি | সব অক্ষরেখার পরিধি সমান নয়।নিরক্ষরেখা থেকে উত্তরে কিংবা দক্ষিণে অক্ষরেখাগুলির পরিধি বাড়তে থাকে। | সব দ্রাঘিমারেখার পরিধি সমান।দ্রাঘিমারেখার পরিধি সবসময় সমান থাকে। |
৫) গণনা | নিরক্ষরেখা থেকে অক্ষরেখা গণনা করা হয়। এর মান (0°। এর উত্তরে ৮৯টি এবং দক্ষিণে ৮৯টি অক্ষরেখা আছে।৯০° উত্তর ও ৯০° দক্ষিণ রেখা নয় এরা বিন্দু। | মূলমধ্যরেখা বা মূলদ্রাঘিমারেখাথেকে দ্রাঘিমারেখা গণনা করা হয়। এরমান 0°। এর পূর্বদিকে ১৮০টি এবং পশ্চিমদিকে ১৮০টি দ্রাঘিমারেখা আছে। |
৬) কৌণিক মাপ | প্রতিটি অক্ষরেখার কৌণিক মাপ ৩৬০° | প্রতিটি দ্রাঘিমারেখার কৌণিক মাপ ১৮০° |
৭) সর্বোচ্চ অক্ষাংশ | সর্বোচ্চ অক্ষাংশ ৯০° | সর্বোচ্চ দ্রাঘিমা ১৮০°। |
৮)সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত | একই অক্ষরেখার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নসময়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়। | একই দ্রাঘিমারেখার সর্বত্র (একইগোলার্ধে) মোটামুটি একই সময়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়। |
৯) অবস্থান | অক্ষরেখাগুলি একে অপরের উত্তরেকিংবা দক্ষিণে অবস্থিত। | দ্রাঘিমারেখাগুলি একে অপরের পূর্ব কিংবা পশ্চিমে অবস্থিত। |
১০)গুরুত্ব | কোন স্থানের অবস্থান নির্ণয় করে। | অবস্থান ও সময় নির্ণয় করে। |
প্রশ্ন (২২) পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দুটি মধ্যরেখার মধ্যবর্তী দূরত্ব লেখ।
উত্তর – দ্রাঘিমারেখার পারস্পরিক দূরত্ব : নিরক্ষরেখায় দুটি দ্রাঘিমারেখার রৈখিক ব্যবধান 111.3 কি.মি. কর্কট ও মকরক্রান্তি রেখায় 102.4 কি.মি., মেরুবৃত্তপ্রদেশে 44.8কি.মি. 80° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে 19.2কি.মি. এবং উভয় মেরুবিন্দুতে এদের মধ্যে কোন ব্যবধান থাকে না। এগুলি মেরুতে পরস্পরের সঙ্গে মিশে গেছে।
প্রশ্ন (২৩) কোনো স্থানের অবস্থান কিভাবে নির্ণয় করা হয়?
•উত্তর- কোন স্থানের অবস্থান নির্ণয় : ভূ-পৃষ্ঠের কোন স্থানের অবস্থান নির্ণয় করতে হলে ঐ স্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা জানা দরকার। কারণ অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমার পারস্পরিক ছেদবিন্দুই হল ঐ স্থানের অবস্থান। যেমন – কোলকাতার অবস্থান নির্ণয় করতে হলে কোলকাতার অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা জানতে হবে। কোলকাতার অবস্থান 22°34′ উত্তর ও 88°30′ পূর্ব দ্রাঘিমার পারস্পরিক ছেদ বিন্দু।
চিত্র : কোলকাতার অবস্থান
প্রশ্ন (২৪) স্থানীয় সময় ও প্রমাণ সময় কাকে বলে?
উত্তর –স্থানীয় সময় ও প্রমাণ সময় (Local time and standard time) :
ও স্থানীয় সময় (Local time) : কোন জায়গায় সূর্য যখন ঠিক মাথার উপরে আসে তখন সেখানে মধ্যাহ্ন হয় অর্থাৎ দুপুর ১২টা বাজে। এই মধ্যাহ্ন সময় অনুসারে যখন দিনের অন্যান্য সময় নির্ণয় করা হয়,তখন ঐ নির্ধারিত সময়কে স্থানীয় সময় বা সৌরকাল বলে।এক্ষেত্রে সূর্যের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সূর্যকে “প্রাকৃতিক ঘড়ি” হিসেবে গণ্য করা যায়।
প্রশ্ন (২৫) পূর্বাহ্ন ও অপরাহ্ন কাকে বলে?
উত্তর -পূর্বাহ্ন ও অপরাহ্ন (Antemeridian and post meridian) : কোন একটি নির্দিষ্ট
দ্রাঘিমার একদিনের ২৪ ঘণ্টা সময়কে পূর্বাহ ও অপরাহ্ন এই দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কোন দিনের মধ্যরাত্রি থেকে মধ্যাহ্ন পর্যন্ত সময়কে পূর্বাহ্ন(ante meridian) বা সংক্ষেপে A.M. বলে। মধ্যাহ্নের পর থেকে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত সময়কে অপরাহ্ন (Post meridian) ব সংক্ষেপে P.M. বলে। (Ante = before এবংpost = after).
প্রশ্ন (২৬)প্রমাণ সময় কাকে বলে?
উত্তর -প্রমাণ সময় (Standard time) দ্রাঘিমারেখা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়সময়ের পার্থক্য দেখা যায়। একাধিক দ্রাঘিমারেখা বিশিষ্ট কোন দেশে নানা রকম স্থানীয় সময় লক্ষ্য করা যায়। ফলে একই দেশে স্থানীয় সময় অনুসারে কাজ কর্ম করা হলে রেল, বিমান, ডাক তার প্রভৃতি বিভাগের কাজকর্ম চালাতে নানারকম অসুবিধা হয়।এই অসুবিধা দূর করার জন্য প্রতিটি দেশ তার বিভিন্ন অংশে পার হয়ে যাওয়া দ্রাঘিমারেখাগুলির মধ্যে একটি মধ্যবর্তী দ্রাঘিমারেখাকে প্রমাণ দ্ৰাখি হিসেবে ধরে সেই দ্রাঘিমার স্থানীয় সময় অনুসারে সারাদেশের কাজকর্ম চালানো হয়। দেশের মধ্যবর্তী ঐ নির্দিষ্ট দ্রাঘিমারেখার স্থানীয় সময়কে ঐ দেশের প্রমাণ সময় বলে।
প্রশ্ন (২৭) ভারতের প্রমাণ দ্রাঘিমা কত?
•
উত্তর -ভারতের প্রমাণ সময় (Indian standard time I.S.T.) : ৮২°৩০′ পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত এলাহাবাদের কোকনদের কাছাকাছি স্থানীয় সময়কে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রমাণ সময় ধরা হয়।
প্রশ্ন(২৮) গ্রিনিচ প্রমাণ সময় উল্লেখ করো ।
উত্তর-গ্রীনিচের প্রমাণ সময়(Greenwich mean time orG.M.T.) : বিভিন্ন দেশের প্রমাণ
সময় আলাদা। এজন্য বিভিন্ন দেশেরসময়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য দেখাযায়। এই অসুবিধা দূর করার জন্য মূলমধ্যরেখার (0°) স্থানীয় সময়কে সারা পৃথিবীর প্রমাণ সময় হিসেবে ধরা হয়। মূলমধ্যরেখা লন্ডনের কাছে অবস্থিত গ্রীনিচ মানমন্দিরের উপর দিয়ে প্রসারিত হয়েছে বলে মূল মধ্য রেখার সময়কে গ্রীনিচ সময় বলা হয়।যেহেতু আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে গ্রীনিচ সময় ব্যবহার করা হয় তাই একে পৃথিবীর প্রমাণ সময়ও (World standard time) বলা হয়।
প্রশ্ন (২৯)একাধিক প্রমাণ দ্রাঘিমা ও প্রমাণ সময়ের উদাহরণ দাও।
উত্তর -পৃথিবীর যেসব দেশ অধিক প্রশস্ত তাদের একাধিক প্রমাণ দ্রাঘিমা ও প্রমাণ সময় লক্ষ্য করা যায়। যেমন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে চারটি প্রমাণ দ্রাঘিমারেখা আছে। যথা— ৭৫° পঃ, ৯০° পঃ, ১০৫° পঃ এবং১২০° পঃ। তাই আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রমাণ সময় চারটি।