৷৷ ৷৷ বারিমন্ডল (Hydrosphere)।।।।।।
সমুদ্রস্রোত (OCEAN CURRENTS)
প্রশ্ন ১) বারিমন্ডল কাকে বলে ?
উত্তর- বারিমন্ডল (Hydrosphere) :ভূ-পৃষ্ঠের মোট আয়তনের ৭১.৪ শতাংশ জল।মহাসাগর,সাগর,উপসাগর,নদ-নদী,খাল-বিল,জলাশয় প্রভৃতি বারিমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবীর মোট আয়তনের ২৯.৬ শতাংশ স্থল। জলভাগের ভৌগোলিক নাম বারিমণ্ডল।,জলভাগের প্রায় ৬০ শতাংশ সাগর-মহাসাগর।
প্রশ্ন ২) পৃথিবীতে কয়টি মহাদেশ ও কয়টি মহাসাগর আছে?
উত্তর- পৃথিবীতে মোট ৭টি মহাদেশ ও ৫টি মহাসাগর আছে।
নিচে মহাসাগরের নাম ছকের সাহায্যে দেখানো হল –
মহাসাগরের নাম | আয়তন (প্রায়)কোটি বর্গ কি.মি |
প্রশান্ত মহাসাগর | 16.90 |
আটলান্টিক মহাসাগর | 8.04 |
ভারত মহাসাগর | 7.25 |
উত্তর মহাসাগর | 1.35 |
দক্ষিণ মহাসাগর | 1.12 |
প্রশ্ন ৩)ভূ-পৃষ্ঠের সর্বোচ্চ স্থানটির নাম কি ?
উত্তর- ভূপৃষ্ঠের সর্বোচ্চ স্থান : মাউন্ট এভারেস্ট। এর উচ্চতা ৮৮৪৮ মি.।
এটি নেপালে অবস্থিত।
প্রশ্ন ৪) ভূ-পৃষ্ঠের সর্বনিম্ন স্থান টির নাম কি ?
উত্তর-ভূ-পৃষ্ঠের সর্বনিম্ন স্থান : প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা খাত। এর গভীরতা প্রায় ১১,০৩৩ মিটার।
প্রশ্ন ৫)পৃথিবীর গভীরতম মহাসাগর টির নাম কি?
উত্তর- গভীরতম মহাসাগর : প্রশান্ত মহাসাগর। গড় গভীরতা ৪,২৮০ মিটার।
• দ্বিতীয় গভীরতম মহাসাগর : ভারত মহাসাগর। গড় গভীরতা ৩৯৬০ মিটার।
প্রশ্ন ৬)সমুদ্রস্রোত কাকে বলে?
উত্তর- সমুদ্রস্রোত (Ocean Current) : সমুদ্রস্রোত বিশাল জলরাশি বা মহাসাগরগুলির প্রাকৃতিক ঘটনা। সমুদ্রের জলরাশি নিয়মিতভাবে মন্থর
গতিতে একখানথেকে অন্যস্থানে প্রবাহিত হয়। সমুদ্রের জলরাশির
এই গতিকে সমুদ্রস্রোত বলে।
প্রশ্ন ৭)সমুদ্রস্রোত ও সমুদ্র ঢেউ এর পার্থক্য লিখ ।
উত্তর-
সমুদ্রস্রোত | সমুদ্র ঢেউ বা সমুদ্র তরঙ্গ |
১)সমুদ্রস্রোত একস্থান থেকে অন্যস্থানে চলাচল করে | ১)সমুদ্র ঢেউ একই স্থানে ওঠা-নামা করে। |
২)এটি ধীরগতিসম্পন্ন | ২) এটি দ্রুত গতি সম্পন্ন |
৩)উপকূলের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে। | .৩) উপকূলের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে না। |
.৪)উপকূলে আছড়ে পড়ে না | ৪) উপকূলে আছড়ে পড়ে । |
প্রশ্ন ৮)সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ লেখ ।
উত্তর- সমুদ্রস্রোতের কারণ (Causes of ocean current)
●1)নিয়তবায়ুপ্রবাহ(planetary winds)-আয়নবায়ু, পশ্চিমাবায়ু, ও মেরুবায়ুর প্রভাবে সমুদ্রের উপরিভাগের জলরাশি কোন স্থান থেকে অন্যস্থানে প্রবাহিত হয়।।
●2)উষ্ণতার পার্থক্য (Differentiation of Temperature): উষ্ণতার পার্থক্য সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি করতে সাহায্য করে। উষ্ণমন্ডলের সমুদ্রের জল বহিঃস্রোতরূপে সমুদ্রের উপরিভাগ দিয়ে শীতলমণ্ডল মেরুপ্রদেশের দিকে প্রবাহিত হয়। আবার উষ্ণমন্ডলের জল অধিক বাষ্পীভূত হয়। তাই জলের ভারসাম্য রক্ষার করার জন্য মেরুপ্রদেশ থেকে শীতল ও ভারী জল সমুদ্রের নিম্ন অংশ দিয়ে অন্তঃস্রোতরূপে উষ্মমণ্ডলের দিকে প্রবাহিত হয়।
•3) লবণতার পার্থক্য (Differentiation of salinty) : সমুদ্রের সর্বত্র লবণতার পরিমাণ সমান নয়। অধিক লবণাক্ত জল অল্প লবণাক্ত জল অপেক্ষা ভারী ও ঘন। তাই বেশি ঘনত্বের জল অল্প ঘনত্বের জলের দিকে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি করে।
●4) পৃথিবীর আবর্তনগতি (Rotation) : পৃথিবীর আবর্তনগতির জন্য বায়ুপ্রবাহের ন্যায় সমুদ্র স্রোতের গতি ও দিক নিয়ন্ত্রিত হয়। ফেরেলের সূত্রানুসারে সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে অগ্রসর হয়। এছাড়া মহাদেশের অবস্থান, মেরুঅঞ্চলে বরফের গলন, সমুদ্রস্রোতকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে।
প্রশ্ন ৯)সমুদ্রস্রোত কয় প্রকার ও কি কি?
উত্তর- সমুদ্রস্রোতের শ্রেণিবিভাগ (Classification) : সমুদ্রস্রোত দু-প্রকার। (১)উষ্ণস্রোত (Warm current) (২) শীতল স্রোত (Cold Current)। উষ্ণস্রোত সমুদ্রের উপরিভাগ দিয়ে পৃষ্ঠপ্রবাহরূপে উষ্ণমণ্ডল থেকে মেরুঅঞ্চলের দিকে এবং শীতলস্রোত সমুদ্রপৃষ্ঠের একটু নিচ দিয়ে অন্তঃপ্রবাহরূপে মেরু অঞ্চল থেকে উষ্ণ মণ্ডলের দিকেপ্রবাহিত হয়।
প্রশ্ন ১০) সমুদ্রস্রোতের বৈশিষ্ট্য লিখ।
উত্তর- সমুদ্রস্রোতের বৈশিষ্ট্য (Features) :
(i) সমুদ্রস্রোত ধীরগতি সম্পন্ন,
(ii)সমুদ্রস্রোত যে দিকে প্রবাহিত হয় সেই দিক অনুসারে সমুদ্রস্রোতের
নামকরণ করা হয়।
(iii) সমুদ্রস্রোত সোজাপথে অগ্রসর না হয়ে ফেরেলের সূত্রানুসারে উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়।
প্রশ্ন ১১)চিত্রসহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় সমুদ্রস্রোতের বর্ণনা দাও ।
উত্তর-
■ প্রশান্তমহাসাগরীয় স্রোত (The Pacific Currents)
(১) নিরক্ষীয় স্রোত (Equatorial Currents) আয়নবায়ুর প্রভাবে নিরক্ষরেখার উভয়দিকে দুটি স্রোত পূর্ব থেকে পশ্চিমদিকে প্রবাহিত হয়। এদের যথাক্রমে উত্তর নিরক্ষীয় ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত বলে।
(২) পেরুস্রোত (Peru Current) : কুমেরু মহাসাগরের শীতল স্রোতের একটি শাখা পশ্চিমা
বায়ুর প্রভাবে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার চিলির পশ্চিম উপকূল বরাবর উত্তর
দিকে অগ্রসর হয়। একে হামবোল্ড স্রোত বলে। এই স্রোত আরোও উত্তরে পেরুর নিকট পেরু স্রোত নামে পরিচিত হয়ে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিশে যায়।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় সমুদ্রস্রোত
(৩) নিউসাউথওয়েলস স্রোত (NewSouthwales) : দক্ষিণ নিরক্ষীয়স্রোত আয়নবায়ুর প্রভাবে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলে ধাক্কা খেয়ে তিনটি শাখায় ভাগ হয়ে যায়। যথা(i) উত্তরের শাখা, (ii) দক্ষিণের শাখা এবংপশ্চিমের শাখা। দক্ষিণের শাখাটি অস্ট্রেলিয়া উপকূলবরাবর
নিউসাউথ ওয়েলস স্রোত নামে দক্ষিণদিকে প্রবাহিত হয়ে কুমেরু স্রোতের সঙ্গে মিশে যায়।
(৪) জাপান বা কুরোশিয়ো স্রোত (Japan or Kuro-shiow : উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত উত্তর-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয় এবংদক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের উত্তর শাখার সঙ্গে মিলিত হয়ে এশিয়ার পূর্ব উপকূলে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্বে বেঁকে জাপানের পূর্ব উপ-
কূল বরাবর কুরোশিও বা জাপানস্রোত নামে প্রবাহিত হয়।
(৫) সুসিমা স্রোত (Susima Current) : জাপানস্রোতের একটি শাখা পশ্চিম উপকূল বরাবর সুসিমা স্রোত নামে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়।
(৬) উত্তর প্রশান্তমহাসাগরীয় স্রোত (North pacific Drift) : জাপান স্রোতের একটি শাখা পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে উত্তর-পূর্বদিকে উত্তর প্রশান্তমহাসাগরীয় স্রোত নামে প্রবাহিত হয়ে কানাডার পশ্চিম উপকূলে ধাক্কা খেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয়ে যায়।যথা(i) দক্ষিণ শাখা (ii) উত্তরশাখা-
(৭) ক্যালিফোর্ণিয়া স্রোত (California Current) : উত্তর প্রশান্তমহাসাগরীয় স্রোতের দক্ষিণের শাখা ক্যালিফোর্ণিয়া নামে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়ে যায়।
(৮) আলাস্কা স্রোত (Alaska Current) : উত্তরপ্রশান্তমহাসাগরীয় স্রোতের উত্তরশাখাটি আলাস্কা স্রোত নামে উত্তরদিকে প্রবাহিত হয়ে সুমেরুস্রোতের
সঙ্গে মিশে যায়।
(৯) বেরিং স্রোত (Berring Current) উত্তরের শীতল সুমেরু স্রোতের কিছু অংশ বেরিংপ্রণালীর
মধ্য দিয়ে বেরিং স্রোত নামে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয় এবং উষ্ণ জাপান স্রোতের সঙ্গে মিশে যায়। শীতল বেরিং স্রোত ও উষ্ণ জাপান মিলনস্থলে ঘন কুয়াশা ও ঝড়ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয়। এখানে মগ্নচড়ার সৃষ্টি হয়েছে।
• শৈবাল সাগর (Sargossa sea) :জাপানস্রোত,উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত,ক্যালিফোর্ণির্নয়া স্রোত ও উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের পারস্পরিক মিলনে স্রোতগুলির মাঝখানে এক জলাবর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে কোন স্রোত বা প্রবাহ না থাকায় আগাছা,শৈবাল জন্মায়। একে শৈবাল সাগর বলে।
নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত : উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্যবর্তী সাগরে পশ্চিম
থেকে পূর্বে একপ্রকার স্রোত প্রবাহিত হয়। একে নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত বলে।
প্রশ্ন ১২)সমুদ্রস্রোতের প্রভাব লেখ।
উত্তর-সমুদ্রস্রোতের প্রভাব : (Influence of ocean current)
(১) উষ্ণতার হ্রাস-বৃদ্ধি : সমুদ্রস্রোত কোন কোন অঞ্চলের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। উষ্ণস্রোত প্রবাহিত অঞ্চলের জলবায়ু উষ্ণ এবং শীতল স্রোত প্রবাহিত অঞ্চলের জলবায়ু শীতল প্রাকৃতির হয়। যেমন – নরওয়ের উপকূল উত্তর আটলান্টিক উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে উষ্ণ থাকে।অপরদিকে শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে নিউইয়র্ক এ শীতকালে তীব্র শীত অনুভূত হয়। ।
(২) মগ্নচড়া সৃষ্টি : উষ্ণ ও শীতলস্রোতের মিলিত ক্রিয়ায় মগ্নচড়ার সৃষ্টি হয়। এই মগ্নচড়া মৎস্যশিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। যেমন – নিউফাউন্ডল্যান্ডের ‘গ্রান্ড ব্যাঙ্কস্’।
(৩) বৃষ্টিপাত : উষ্ণস্রোতের উপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু প্রচুর পরিমাণে জলীয়বাষ্প গ্রহণ করে স্থল
ভাগে ধাবিত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। যেমন- উষ্ণ স্রোতে ইংলন্ডের পশ্চিম উপ-কূলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
(৪) তুষারপাত : শীতলস্রোতের উপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু তুষারপাত ঘটাতে সাহায্যকরে। যেমন – শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে ল্যাব্রাডর উপকূলে প্রবল তুষারপাত হয়।
(৫) ঘনকুয়াশা ও ঝড়ঝঞ্ঝা সৃষ্টি : উষ্ণ ও শীতলস্রোতের মিলনের ফলে হঠাৎ উষ্ণতার তারতম্য দেখা দেয় এবং প্রবল কুয়াশা ও ঝড়ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয়। যেমন –নিউফাউন্ডল্যান্ডোর কাছে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত ও শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনে ঘনকুয়াশা ও ঝড়ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয়।
(৬) বরফমুক্ত বন্দর : উষ্ণস্রোত প্রবাহিত উপকূলে বরফমুক্ত বন্দর গড়ে ওঠে। যেমন- জাপান উপকূলের বন্দর।
(৭) পরিবহনের সুবিধা : উষ্ণসমুদ্রস্রোতের অনুকূলে জাহাজ ও নৌকা চলাচলের সুযোগসুবিধা বেশিপায় এবং শীতল সমুদ্রস্রোতের গতিপথে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, হিমশৈল ইত্যাদির জন্য জাহাজ ও নৌকা চলাচলের নানারকম অসুবিধার সৃষ্টি হয়।
(৮) মৎস্যের প্রধান খাদ্য প্লাঙ্কটনের বৃদ্ধি : উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে মৎস্যের প্রধান খাদ্য প্লাঙ্কটন প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। ফলে মৎস্য ব্যবসার উন্নতি ঘটে।